টিকা-ইলিশ নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদির ‘সোনালি অধ্যায়’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে বিদ্যমান ‘ভারত-বাংলাদেশ সোনালি অধ্যায়’ এই মুহূর্তে যথেষ্ট ফিকে হয়ে গেছে। প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি ভারতের পাঠানো করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে বসে আছেন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও আর এক ডোজ টিকাও পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ভারত। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঢাকা। যার সরাসরি প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ ইস্যুতে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশের। তারপরও গত বছর জামাইষষ্ঠীতে পশ্চিমবঙ্গে দুই হাজার টন ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু এ বছর পশ্চিমবঙ্গে যায়নি পদ্মার ইলিশ।
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এমন সরলীকরণ করাটাও ঠিক হবে না যে টিকা পাঠানো হয়নি বলেই ইলিশ রফতানি বন্ধ আছে। কিন্তু এটাও ঠিক, টিকা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে এতটাই টানাপড়েন শুরু হয়েছে যে ইলিশ-কূটনীতির আবহাওয়াটাই আর নেই।
প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ইলিশ এক কূটনৈতিক প্রতীকও বটে। এর আগে স্থলসীমান্ত চুক্তি সই করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঢাকায় আসেন, ইলিশ নিয়ে কিছুটা রসিকতার ঢংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। ভোজের তালিকায় ইলিশের পঞ্চপদ দেখে মমতা শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন তারা ইলিশ আটকে রেখেছেন? শেখ হাসিনার জবাব ছিল, ‘তিস্তার পানি এলেই মাছ সাঁতার কেটে চলে যাবে ও পাড়ে!’
তিস্তা চুক্তি নিয়ে সেই আবেগ আপাতত সংযত রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত এক বছরে পর পর এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মেজাজকে সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে। ইতোমধ্যে বেজিংয়ের উপহার হিসেবে প্রায় ১১ লাখ ডোজ চীনা টিকা ঢাকায় পৌঁছেছে। আরও ৩০ লাখ ডোজের দাম দেওয়া হয়েছে।
টিকা নিয়ে মার্চের ঢাকা সফরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। কিন্তু ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে টিকা রফতানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সাউথ ব্লক।
বাংলাদেশের বক্তব্য, টিকার বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে এতটাই আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল যে তখন আগ্রহী চীনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তাদের কাছ থেকে যথেষ্ট দর কষাকষির জায়গায় পৌঁছে গেছে চীন।
গত বছরের আগস্টে চীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে টিকার প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শুরু করেছিল। তখনই টিকার বিষয়ে চরম গুরুত্ব দেয় মোদি সরকার। তাই চীনকে ফিরে যেতে দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে।
এমএইচএস