আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে ধীরগতি আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চলমান সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মাঝেই তালেবান বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান হামলা এবং সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে নতুন নতুন এলাকা দখলে নেওয়ায় এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে স্থানীয় সময় সোমবার (২১ জুন) জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি।

সোমবার সাংবাদিকদের কিরবি বলেন, সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের মধ্যে সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটা কার্যকর থাকবে। তবে সেনা প্রত্যাহারের গতি কিছুটা কমিয়ে আনা হতে পারে।

জন কিরবি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানে অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। তালেবান জেলা সদরগুলোতে হামলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাচ্ছে। যার কারণে দেশটিতে সহিংসতার মাত্রা এখনও অনেক বেশি।’

পেন্টাগনের এই মুখপাত্র বলেন, ‘আর তাই সহিংসতা কমাতে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি সেনা প্রত্যাহারে ধীরগতির কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে আমরা সেটা ব্যবহার করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছি। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি, সেখানে আমাদের সক্ষমতা, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের আরও কী কী প্রয়োজন এবং সর্বোপরি সেনা প্রত্যাহারের গতি; এ সকল কিছু বিবেচনায় নিয়েই আক্ষরিকভাবেই রিয়েল টাইম সিদ্ধান্ত নিচ্ছি আমরা।’

এর আগে প্রায় ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে উভয়পক্ষ। সেখানে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। সেই অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের কাজ চলছে।

এদিকে সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির শাসন ক্ষমতায় ফের তালেবানরা ফিরতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জোরদার হামলা শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।

অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

সূত্র: এএফপি

টিএম