ইরানে সদ্য শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে প্রকৃত নেতা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেশটির জনগণের ছিল না।

শনিবার এএফপিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল না। ইরানের বিপুল সংখ্যক জনগণ নির্বাচন বর্জন করেছেন। নির্বাচন বলতে যদি প্রকৃত নেতা বেছে নেওয়াকে বোঝানো হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বলব- ইরানের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনগণ (নির্বাচনে) ভোট দেননি, তাই একে সফল বলার উপায় নেই।’

শুক্রবার শেষ হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোট গণনার পর দেখা গেছে ৬২ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

এদিকে, দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশন চ্যানেলের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি জানিয়েছে, ইরানে মোট ভোটারের সংখ্যা বর্তমানে ৫ কোটি ৯০ লাখ। তাদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র অর্ধেক, প্রায় ৩ কোটি ভোটার।

ইরানের চলতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার আবেদন করেছিলেন প্রায় ৬০০ জন, তাদের মধ্যে ৪০ জন ছিলেন নারী; কিন্তু দেশটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থি সরকারের প্রভাবপূর্ণ সংগঠন গার্ডিয়ান কাউন্সিল রাইসিসহ ৭ জন ছাড়া অন্যান্য সবার প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করে। এই সাত জনের মধ্যে তিনজন নির্বাচনের আগেই প্রার্থিতার আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থাকেন ৪ জন।

সেই অনুযায়ী চলতি বছর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা প্রার্থীরা হলেন ইব্রাহিম রাইসি, আবদুল নাসের হেমাতি, মহসিন রেজাই ও আমির হোসেন ঘাজিজাদ্দেহ হাসেমি।

৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন। সেই হিসেবে নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও, ইরানের শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খামেনির বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত রাইসি।

নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোর বিরোধী হিসেবে জাহির করা রাইসি রাজনৈতিক দিক থেকে শিয়া ইসলামী কট্টরপন্থার সমর্থক। খামেনির মতো না হলেও দেশটির সংখ্যাগুরু শিয়া সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থিমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক, তবে ইরানের গণতন্ত্রপন্থি বলয়ে তার জনপ্রিয়তা বেশ কম।

এমনিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কট্টর সমালোচক হলেও পরমাণু প্রকল্পকে ঘিরে নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনীতির বিপুল ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে এই ইস্যুতে বর্তমানে সুর নরম করেছেন রাইসি। যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রাহী।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইরান যদি পরমাণু চুক্তির শর্তগুলো পালনের ব্যাপারে আন্তরিক হয়, সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন- আলোচনা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই।’

সূত্র: এএফপি

এসএমডব্লিউ