করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া সম্ভব নয়। রোববার (২০ জুন) দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে এমনটাই জানিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। করোনায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্প্রতি দুই ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর পর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার একথা জানায়।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে একটি যুক্তিও দেওয়া হয়। যুক্তিতে বলা হয়, করোনায় মৃতদের ক্ষতিপূরণ দিলে অন্য রোগে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। হলফনামায় এটাও জানানো হয় যে, রাজ্যগুলোর পক্ষ থেকেও করোনায় মৃতদের পরিবারকে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়।

সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে জমা দেওয়া ১৮৩ পাতার পাতার হলফনামায় মোদি সরকার আরও জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ভারতে ৩ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তা আগামীদিনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে এতো বিশালসংখ্যক মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়।

অবশ্য করোনা ছাড়া বন্যা ও ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু করোনায় মৃতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া অসম্ভব। কারণ হিসেবে, করোনার প্রভাবে ভারতের অর্থনীতির বেহাল দশা এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে খরচ বদ্ধির কথা জানানো হয়েছে। আবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে অন্য রোগে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ না দিলে অবিচার করা হবে বলে দাবি করা হয়েছে।

মোদি সরকারের দাবি, ‘যেকোনো নীতি বিশেষজ্ঞদেরই ঠিক করা উচিত এবং তাদের তত্ত্বাবধানেই তা কার্যকর করা উচিত। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে কোনো নীতি নির্ধারণ করতে পারে না।’

ভারতে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারালে নিহতের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা অর্থ সাহায্য করা হয়। তবে করোনায় মৃতের পরিবারকে এই পরিমাণ অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়। দেশটির কেন্দ্রীয সরকারের দাবি, এটি কেবলমাত্র ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের’ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

টানা দুই মাসের তাণ্ডবের পর করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ভারতে কমতে শুরু করেছে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু। গত ৮১ দিনের মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সবচেয়ে কম মানুষ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়া দৈনিক মৃত্যুও নেমে এসেছে দেড় হাজারের কাছাকাছি। কমেছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও।

রোববার (২০ জুন) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৪১৯ জন মানুষ। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৬৫ জনে।

অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৫৭৬ জন। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৩ জন।

সূত্র: এনডিটিভি

টিএম