টোকিওতে জরুরি অবস্থা জারি
করোনাভাইরাসে দৈনিক সংক্রমণ রেকর্ড বৃদ্ধির পর জাপানের রাজধানী টোকিওতে মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। করোনা মহামারি মোকাবিলায় জারিকৃত এই জরুরি অবস্থা আগামী শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা।
তিনি বলেছেন, দেশজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারে জনগণের জীবন এবং অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। তবে জরুরি অবস্থার সময় যেসব করোনাবিধি কার্যকর করা হবে তা বিশ্বের অন্যান্য অংশের কঠোর লকডাউনের মতো হবে না। এমনকি গত বসন্তে দেশটির প্রথম দফার লকডাউনের মতো কঠোরও হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
জরুরি অবস্থা চলাকালীন রাজধানীর সব রেস্তোরাঁ এবং বার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মদ্য-পানীয় বিক্রি বন্ধ করবে। এর এক ঘণ্টা পর সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এর পাশাপাশি টোকিওর বাসিন্দাদের রাত ৮টার পর অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ফনে টোকিও এবং পার্শ্ববর্তী তিন এলাকার কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা জারির জন্য জাপানের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল। এতে কমিউটারে যাত্রীসংখ্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অনলাইনে সর্বোচ্চ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছিল।
এর আগে, টোকিওর চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে বলে জাপানের করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলাবিষয়ক দেশটির ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা প্রত্যেকদিন রেকর্ডসংখ্যক করোনা সংক্রমণ দেখছি। আমাদের অত্যন্ত গুরুতর সঙ্কটের শঙ্কা আছে।
বৃহস্পতিবার টোকিওতে রেকর্ড ২ হাজার ৪৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিন আগে দেশটির এই রাজধানী শহরে এক হাজার ৫৯১ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
করোনার প্রকোপ বাড়লেও দেশটিতে এই মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৭০০ জনের কিছু বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। দেশটিতে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার।
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হানা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যে নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি।
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে।
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে।
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস