সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত মুখোমুখি বৈঠকের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৮ সালের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো। জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের প্রশংসা করা হলেও দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে তা ভূমিকা রাখবে সামান্যই।

বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বৈঠকে আলোচনার সময় (উভয়পক্ষের) মতের পার্থক্য সামনে এসেছে। তবে সেটা খুব বড় আকারে নয়। এছাড়া রাশিয়া এখন নতুন করে আর কোনো স্নায়ু যুদ্ধে জড়াতে চায় না।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও আলোচনার জন্য আরও বেশি সময় নির্ধারিত ছিল।

বাইডেন বলছেন, আলোচনায় আরও বেশি কথা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রকৃত সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন আলোচনা শুরুর বিষয়ে বৈঠকে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে। এমনকি উভয় দেশের বহিষ্কৃত রাষ্ট্রদূতদের পুনরায় দুই দেশের দূতাবাসে ফেরাতে রাজি হয়েছেন তারা।

তবে সাইবার সিকিউরিটি, ইউক্রেন ইস্যু এবং রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনি-সহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি উভয়পক্ষ। নাভালনি বর্তমানে রাশিয়ার একটি কারাগারে আড়াই বছরের সাজা খাটছেন। তার শরীরিক অবস্থা বেশ খারাপ বলে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন মোটামুটি হুমকির সুরেই বলেছেন, নাভালনি যদি কারাগারে বন্দি অবস্থাতেই মারা যান, তাহলে রাশিয়ার জন্য ‘ধ্বংসাত্মক পরিণতি’ অপেক্ষা করছে।

এদিকে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাইডেনের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনেতা। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নন।

তবে বৈঠকে উভয়পক্ষ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের অধিকারসহ মানবাধিকার ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করেন। এছাড়া আলেক্সেই নাভালনিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগও উড়িয়ে দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেন, নাভালনি আইন অমান্য করেছিলেন এবং চিকিৎসা শেষে জার্মানি থেকে দেশে ফিরলে তাকে কারাগারে যেতে হবে জেনেই তিনি দেশে ফিরেছিলেন।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলা এবং নিগ্রোদের অধিকার বিষয়ক আন্দোলন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর মতো কোনো ঘটনা রাশিয়া তার নিজের ভূখণ্ডের ভেতরে চায় না বলেও মন্তব্য করেন পুতিন।

তবে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের বিষয়ে পুতিনের মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে আখ্যায়িত করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, মানবাধিকারের বিষয়ে তার দেশ সবসময় সোচ্চার থাকবে।

রাশিয়া কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চাচ্ছে, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, রাশিয়ার বর্তমানে খুব, খুব কঠিন একটা পরিস্থিতিতে আছে। তার ভাষায়, ‘তারা (রাশিয়া) বর্তমানে চীনের হাতে নিষ্পেষিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটি যেকোনো মূল্যে পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকতে চাইছে।’

জেনেভার ভিলা লা গ্রেঞ্জে দুই নেতার ওই বৈঠক স্থানীয় সময় বেলা ১টায় শুরু হয়ে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত চলে। পরে সংক্ষিপ্ত বিরতি শেষে আবারও শুরু হওয়া বৈঠক ৫টা ৫ মিনিটে শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন। সেখানে তারা দুই দেশের তলানিতে থাকা চিরবৈরী সম্পর্ক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রুশ এই প্রেসিডেন্ট। পুতিন বলেন, তিনি মনে করেন না যে, তাদের মধ্যে কোনও ধরনের বৈরীতা আছে।

বৈরী এই দুই দেশের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে তলানিতে পৌঁছেছে। গত মার্চে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্টকে খুনি বলেও মন্তব্য করেছিলেন। মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নজিরবিহীন অবনতির মাঝে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুরোধে জেনেভায় বাইডেন-পুতিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।

সূত্র: বিবিসি

টিএম