ভোরের আলো ফোটার আগে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনী গোপন অভিযান চালিয়ে অন্তত তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) গোয়েন্দা বাহিনীর দুই কর্মকর্তা রয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। 

ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলছে, নিহত দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আধাম ইয়াসির আলাওয়ি (২৩), তায়সির ইসাকে (৩২) শনাক্ত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অভিযানে নিহত তৃতীয়জন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন। তার নাম জামিল আল-আমুরি।

ওয়াফা বলছে, ইসরায়েলি চোরাগোপ্তা অভিযানে ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-বাজাউর (২৩) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন বার্তাসংস্থা এসোসিয়েট প্রেসের (এপি) হাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গোপন অভিযানের একটি ভিডিও এসেছে। এতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা একটি গাড়ির পেছনের দিকে নিজেদের আড়াল করছেন। এ সময় হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে একজনকে ভিডিওতে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ইসরায়েলের গোপন বাহিনীর সঙ্গে তারা গুলি বিনিময় করছে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আল-আমুরি একজন সাবেক কারাবন্দি এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সদস্য। কিন্তু ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত আল-আমুরির বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি।

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার হ্যারি ফাওসেত বলেছেন, একটি বেসামরিক গাড়িতে গোপন অভিযানের সময় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের একজন সদস্যকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছিলেন বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ওই অভিযানে একজন নিহত এবং আরও একজন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আহত ব্যক্তিকে নিয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তি ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

এদিকে, ইসরায়েলি অভিযানে নিহত আলাওয়ির জানাজা ফিলিস্তিনের জেনিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় শোকাহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তার জানাজায় অংশ নেন। এছাড়া নিহত অপর দু’জনের দাফনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জেনিন শহরজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন শোকাহত ফিলিস্তিনিরা।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্র ইসরায়েলি বাহিনীর গোপন অভিযানে ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। এই অভিযানকে ‌‘বিপজ্জনক ইসরায়েলি উসকানি’ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

গত মাসের শেষের দিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংঘর্ষ কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে মিসরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে ১১ দিনের এই সংঘাতের অবসান ঘটে। কিন্তু ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে আরব-ইহুদি সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাতে ৬৬ শিশুসহ ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি ও ১২ ইসরায়েলি মারা যান। 

এসএস