করোনাভাইরাসের টিকা পেতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে চীন এবং রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। শ্রীলঙ্কা বুধবার থেকে দেশটির গর্ভবতী নারীদের শরীরে চীনের একটি টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে। অন্যদিকে, নেপালও চীনের তৈরি অপর একটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি পুনরায় শুরু করেছে।

গত মাসের শেষের দিকে মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিত হয়ে যায় নেপালে। চীনের সিনোফার্মের ১০ লাখের বেশি ডোজ টিকা পাওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে আবারও টিকাদান শুরু করেছে নেপাল। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ নেপালই করোনার টিকা পেতে বিশ্বের কাছে সহায়তার আকুতি জানিয়েছিল।
 
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেপালে সরবরাহ করেছিল ভারত। কিন্তু ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় গত মার্চে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার রফতানি পুরোপুরি স্থগিত করে নয়াদিল্লি। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার যে কয়েকটি দেশ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছিল রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে নেপালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামির কুমার অধিকারী বলেন, উভয় প্রতিবেশীসহ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের কাছে করোনা টিকা সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছিল নেপাল। কিন্তু এই অনুরোধে কেউই সাড়া দেয়নি; দেশে পৌঁছায়নি কোনও অতিরিক্ত টিকাও।

দেশটিতে মাত্র ২ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসের টিকার উভয় ডোজ পেয়েছেন। মার্চে দেশটির প্রায় ১৩ লাখ মানুষ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেন। এরপরই টিকা সঙ্কটে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষা শুরু হয় তাদের।

এদিকে, গত সপ্তাহে চীনের সিনোফার্মের টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর ব্যাপক তৎপরতায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার দেশটির গর্ভবতী নারীদের টিকাদানের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশ রাশিয়ার কাছ থেকেও স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের ১ কোটি ৩০ লাখ ডোজ কিনছে।

শ্রীলঙ্কার করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় কমিটির প্রধান ও সেনাপ্রধান শাভেন্দ্র সিলভা আগামী বছরের শুরুর মধ্যেই দেশটির সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকার আওতায় আনার প্রত্যাশা করেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলছে, প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ লাখ ডোজ টিকা জাপানের কাছ থেকে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

অন্যদিকে, সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ গত এপ্রিল থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ এখনও প্রয়োগ করছে। গত মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সিনোফার্মের ৫ কোটি ডোজ টিকা কিনতে চায় বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, স্পুটনিকের ৫০ লাখ ডোজ কিনবে ঢাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ চেয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮ কোটি ডোজ টিকা রফতানির পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা টিকার সমবণ্টনের লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গঠিত উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় গত সপ্তাহে ফাইজারের ভ্যাকসিনের একটি চালান ঢাকায় পৌঁছেছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া টিকার রফতানি কবে নাগাদ পুনরায় শুরু হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি ভারত। মঙ্গলবার নয়াদিল্লি বলেছে, দেশে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের কাছে ৪৪ কোটি ডোজ টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে ভারত।

এছাড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা হায়দরাবাদভিত্তিক কোম্পানি বায়োলজিক্যাল ই’র ৩০ কোটি ডোজ টিকারও আগাম অর্ডার করে রেখেছে ভারত।

এসএস