ভারতে সম্প্রতি করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছে, তার জন্য দায়ী দেশটিতে শনাক্ত হওয়া সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) ডেল্টা। দেশটির দুই সরকারি গবেষণা সংস্থা সার্স-কোভ-২ জিনোমিক কনসোর্টিয়া এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

এই দুই সংস্থার সাম্প্রতিক গবেষষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম শনাক্ত হওয়া ধরন আলফা ভ্যারিয়েন্ট যা এর আগে পরিচিতি পেয়েছিল ব্রিটিশ বা ইউকে ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্তত ৫০ গুন বেশি সংক্রামক ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন।

সার্স-কোভ-২ জিনোমিক কনসোর্টিয়া ও ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল আরও জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের মোট ধরন বা প্রজাতির সংখ্যা ১২,২০০। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ধরনটি হলো ডেল্টা। অন্যান্য ধরনগুলোর সংক্রমণ ও ক্ষয়ক্ষতি করার ক্ষমতা ডেল্টার তুলনায় নিতান্তই তুচ্ছ।

ভারতের সবগুলো রাজ্যেই এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে, তবে এর উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে দিল্লি, অন্ধ্র, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওডিশা ও তেলেঙ্গানায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, গত মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটির যে কয়েকটি রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে, তার জন্য দায়ী এই ডেল্টা ধরন।

তারা আরও জানান, যারা করোনা টিকার ডোজ নিয়েছেন, ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার ধরন আলফা ভ্যারিয়েন্টে তাদের আক্রান্ত হওয়ার কোনো নজির নেই, কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এতটাই শক্তিশালী যে বাজারে প্রচলিত করোনা টিকার ডোজ গ্রহণকারীদেরও এই ধরনটি আক্রমণ করতে পারে।

টিকার ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এমনটি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন ভূরি ভূরি উদাহারণ ভারতে গত কয়েক মাসে দেখা গেছে।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষসহ বিভিন্ন পশুপাখির মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ফলে ক্রমাগত অভিযোজন বা মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাস। পরিবেশ পরিস্থিতি ও আক্রান্তের শারিরীক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় মূল ভাইরাসটির পাশাপাশি এর কয়েকটি পরিবর্তিত/ অভিযোজিত প্রজাতিরও আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে, যেগুলোকে আমরা সাধারণভাবে ধরন বা ভ্যারিয়েন্ট বলে উল্লেখ করে থাকি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত মূল করোনাভাইরাসের ৪ টি প্রধান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে এবং এই ধরন বা ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রত্যেকটির বৈজ্ঞানিক নামের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে যে দেশে প্রথম কোনো একটি ধরন পাওয়া গিয়েছিল সেই দেশের নামে সেটির নামকরণ করা হয়।

যেমন—করোনাভাইরাসের যে ধরনের নাম বি.১.১.৭, সাধারণ মানুষজন সেই ধরনটিকে চেনেন ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নামে। ঠিক তেমনি, ডেল্টা (ভারতীয়) ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১,৬১৭।

গত বছর অক্টোবরে প্রথম শনাক্ত হয় বি.১.৬১৭। এর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৩ টি দেশ ও অঞ্চলে এটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আন্তর্জাতিক জীবাণু বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, মূল করোনাভাইরাস তো বটেই, এমনকি এই ভাইরাসের ব্রিটিশ ধরনের চেয়েও বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী বি.১.৬১৭ বা ডেল্টা।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ