ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধে মানতে হবে যেসব সতর্কতা
করোনায় আক্রান্ত অনেকের শরীরে এক ধরনের মারাত্মক ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। যার নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় মিউকরমাইকোসিস। যাদের শরীর তুলনামূলক বেশি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে এই সংক্রমণ।
মিউকরমাইকোসিস মূলত কেতাবি নাম হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এই রোগ ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামেই পরিচিত। যদিও এ নামে কোনো রোগের অস্তিত্ব নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে যে নামেই ডাকা হোক, তার মারণক্ষমতা একই থাকে।
বিজ্ঞাপন
কেন সংক্রমণ হচ্ছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিউকরমাইকোসিসের অন্যতম কারণ মানবদেহের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে স্টেরয়েড প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এই স্টেরয়েড প্রয়োগের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবেই সদ্য কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের ব্লাড সুগারের মাত্রা থাকছে বেশি। যারা আগে ডায়াবেটিস রোগী ছিলেন না, তাদের রক্তেও শর্করার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার অন্যতম বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. কুণাল সরকার বলেন, ‘কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় প্রাথমিক নজর থাকে ফুসফুস, অক্সিজেন স্যাচুরেশনের ওপর। তার ফলে মিউকরমাইকোসিসের সমস্যা চোখে পড়তে কয়েকটা দিন দেরি হয়ে যায়। তাতেই রোগটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।’
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাজ্যে মিউকরমাইকোসিসে মোট আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে। নতুন সন্দেহভাজন তিন রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। পৃথক তিনটি জেলায় তিন রোগী পাওয়া গিয়েছে যাদের উপসর্গ ছত্রাক সংক্রমণের মতো। এছাড়াও আরও ১০ জন ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মোট সন্দেহভাজন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে। ছত্রাক সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত চার জন।
কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতলের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে মিউকরমাইকোসিসের বিরাট কোনো প্রভাব নেই। তবে সংখ্যাটা কম ছিল আগে, এখন বেড়েছে হঠাৎ করে। সেই জন্য একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।’
ডা. কুণাল সরকার বলেন, ‘এই সংক্রমণের প্রেক্ষিতে মহামারি শব্দপ্রয়োগ কিছুটা নিরর্থক। অনেক সমস্যার মধ্যে এটাও একটা সমস্যা। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এখনও ডাক্তার হিসেবে আমাদের কাছে একটা স্পষ্ট ধারণা নেই যে, কী কারণে এই সমস্যাটা হচ্ছে।’
কী সতর্কতা জরুরি
আপাতত ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। স্টেরয়েড নিয়ে ভাবনা তো রয়েছেই। এর সঙ্গে অবশ্যই নজর রাখতে হবে রক্তের শর্করায়। ডায়াবেটিস থাক বা না-ই থাক, নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে ব্লাড সুগার।
রক্তে সুগার লেভেল ১০০ বা ১১০ এর চেয়ে বেশি হলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৪০ ছাড়িয়ে গেলে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস রয়েছে এমন করোনা রোগী যাদের স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে তাদের ডোজ বেশি হয়ে গেলে বিপদ।
কারণ এই রোগীদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বেশি ঘটছে। আর এই ছত্রাকে ফুসফুস, চোখ, কিডনি ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হচ্ছে। সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে।
সুষম খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এদিকে করোনা ঠেকাতে ‘সচেতন নাগরিকরা’ অনেকেই ইচ্ছে মতো ওষুধ খাচ্ছেন। তাতেই হিতে বিপরীত হয়েছে। এমনটা অনেক চিকিৎসকের বক্তব্য।
ডা. সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধ করতে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ও জিঙ্ক ব্যবহার করছেন মানুষ। এমনকী স্টিম নিচ্ছেন মাত্রাতিরিক্তভাবে। এর ফলে মানুষের শরীরেই ক্ষতি হচ্ছে। সেটা আটকাতে হবে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টেরয়েডের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন— বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, স্থুলতা বৃদ্ধি, ঘুম কমে যাওয়া বা স্লিপিং ডিসঅর্ডার, মানসিক অস্থিরতাসহ শরীরে নানা ধরনের অস্বস্তি।
এছাড়া ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমণের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। গুটি বসন্ত, হামও দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমাণ, অস্টিওপোরোসিস, গ্লুকোমার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
টিএম