বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বিরুদ্ধেও নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন কাজ করবে বলে দাবি করেছে চীন। সোমবার চীনের ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট সিনোফার্ম ও চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ এই দাবি করেছে। 

চীনে বসন্ত উৎসবের আগে চলতি সপ্তাহে সাংহাই প্রদেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর দেশটির ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা জোর দিয়ে বলেছেন, সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরনেও কাজ করবে তাদের ভ্যাকসিন।

গত সপ্তাহে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন শর্ত সাপেক্ষে প্রয়োগের অনুমতি দেয় দেশটির সরকার। চীনা ভ্যাকসিনের প্রস্তুতকারকরা বলেছেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বিরুদ্ধেও নিজেদের ভ্যাকসিন কাজ করবে বলে আত্মবিশ্বাসী তারা।

চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়াং জিয়াওমিং সোমবার দেশটির সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভিকে বলেন, করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরনটি ভ্যাকসিনকে অকার্যকর করতে সক্ষম হবে না।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে বিভিন্ন কমিউনিটি, খাদ্য ও সেবাখাতের কর্মী এবং অন্যান্যদের মাঝে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিশ্বে একমাত্র দেশ হিসেবে চীনই ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।

অজ্ঞাত পর্যবেক্ষকদের বরাত দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলছে, ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় বয়োজ্যেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবীর হার সীমিত ছিল; যা বর্তমানে প্রবীণদের মাঝে ভ্যাকসিনের সতর্কতামূলক ব্যবহার ব্যাখ্যা করে। সিনোফার্ম বলছে, তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন দুই থেকে চার সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ প্রয়োগে ৭৯ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। প্রত্যেকটি ভ্যাকসিন ডোজের একটি করে নম্বর রয়েছে; যা আইডি কার্ডের মতো।

চীনা এই প্রতিষ্ঠান বলছে, আইডি কার্ডের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের উৎস, কাঁচামাল এবং এর উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে। গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের নতুন বর্ষ উদযাপন ঘিরে লাখ লাখ নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চীনে ফিরে আসে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই চন্দ্র নববর্ষ কাটাতে প্রবাসীরা প্রত্যেক বছর দীর্ঘ ছুটিতে দেশে ফেরেন। 

কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজধানী বেইজিংয়ে বাস চালক ও বিভিন্ন কমিউনিটির কর্মীসহ ৭৩ হাজারের বেশি মানুষকে ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি বেইজিংয়ে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য মানুষকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

কঠোর লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চীন করোনাভাইরাস মহামারি বৃহৎ অংশে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। মহামারির লাগাম টানতে এখনও দেশটির সীমান্ত অধিকাংশ বিদেশির জন্য বন্ধ রেখেছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করেছে।

করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি

• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।

• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি।

• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে।

• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে।

• ১১ মার্চ ‌‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ ৬২ হাজার।

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হানা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যে নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, ওয়ার্ল্ডোমিটারস।

এসএস