দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে চীন থেকে বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় তিন কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দক্ষিণ এশিয়া দুঃখজনক এই মাইলফলক ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মহামারির প্রকোপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে। দ্বিতীয় দফার প্রকোপেই দেশটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছিল। অবশ্য মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে ভারতে আক্রান্ত কমছে। তবে মৃত্যু এখনো ততটা কমেনি। 

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর চলতি মে মাসেই করোনায় রেকর্ড সর্বোচ্চ মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে গোটা বিশ্বে করোনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ভারতের।  

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো হলো ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। এখন পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৮ শতাংশ এবং কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো মানুষের প্রায় ১০ শতাংশই এসব দেশের বাসিন্দা। 

দেশগুলো থেকে দেওয়া সরকারি হিসাবের বরাতে এ তথ্য জানালেও মহামারি ভাইরাসটিতে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাটা অনেক বেশি বলেই সন্দেহ জোরালো হচ্ছে দিন দিন। তাই করোনার প্রকোপের বাস্তব চিত্র এই পরিসংখ্যানে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ধারণা।

মে মাস থেকে ভারত প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ আঠারো বছরের বেশি বয়সী সবাইকে টিকা দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু বিপুল জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী দেশটি টিকার যোগান দিতে পারছে না। অথচ গোটা বিশ্বের মধ্যে টিকা উৎপাদনে শীর্ষ স্থানটি দখল করে রয়েছে ভারত।   

ভারত এখন সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, দেশীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যক্সিন আর রাশিয়ার গামালায়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুটনিক-৫ দিয়ে করোনার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে।  

১৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বে করোনায় সর্বাধিক আক্রান্ত ১০ দেশের মধ্যে টিকাদানের হারে ভারতের অবস্থান তলানিতে। টিকার সংকট ও মহামারি মোকাবিলা নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন প্রধামন্ত্রী মোদির সরকার।

সাড়ে ছয় কোটির বেশি টিকা বিভিন্ন দেশে বিক্রি ও উপহার দেওয়ার পর টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় ভারত গত মার্চে টিকা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও আফ্রিকার অনেক দেশে টিকার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।   

আগামী অক্টোবরের আগে ভারত টিকা রফতানি পুনরায় চালু করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নেপাল ও বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় সংকটে পড়েছে। সংকট নিরসনে তারা নতুন করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

এদিকে পাকিস্তান চীন থেকে টিকা উপহার পেয়েছে এবং কেনাও শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশের কাছে টিকা সরবরাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বৈশ্বিক টিকা জোট কোভ্যাক্স থেকে টিকা পেয়েছে পাকিস্তান। দেশটি প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকেই টিকা দিচ্ছে।      

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা নামক একটি বৈশ্বিক পরিসংখ্যান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মোট প্রায় ২২ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মহামারি মোকাবিলায় যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। 

এএস/জেএস