করোনার উৎস : দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রকৃত উৎস সম্পর্কে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তার কাজ শুরু করতে গিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
প্রাকৃতিকভাবে এই ভাইরাসটির উদ্ভব হয়েছে না কি গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে— এই প্রশ্নেই মতানৈক্য দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে। এগুলো হলো ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রক কার্যালয় অফিস অব ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (ওডিএনআই)।
ওডিএনআইয়ের স্ট্যাটেজিক কমিউনিকেশন (কৌশলগত যোগাযোগ) বিভাগের সহকারী পরিচালক আমান্ডা স্কচ সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোথা থেকে, কখন ও ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাসের আগমন হলো সে ব্যাপরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনও বিশেষ কিছু জানে না, কিন্তু এই ভাইরাসটির উদ্ভব প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে না কি গবেষণাগারে এটি তৈরি করা হয়েছে, এই প্রশ্নে দ্বিধায় পড়েছেন দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।’
‘দেশের প্রধান তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, সিআইএ এবং এনএসএর মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থা দেখা দিয়েছে। দু’টি সংস্থা বলছে প্রাকৃতিকভাবেই এই ভাইরাসটির আগমন হয়েছে এবং একটি বলছে, এই ভাইরাসটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে।’
‘আরও সমস্যা হলো তিনটি সংস্থার কর্মকর্তাদের কেউই নিজেদের মতামতের ওপর যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারছেন না।’
তবে কোন দুটি সংস্থা প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসটির উদ্ভব হয়েছে— এই তত্ত্বের পক্ষে এবং কোনটি এর বিপক্ষে, সেই সম্পর্কে বিবৃতিতে বিস্তারিত কিছু বলেননি আমান্ডা।
সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের প্রকৃত উৎস সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ প্রতিবেদন দিতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কোনো আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে, না কি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে—এ প্রশ্নের মিমাংসা এখনও হয়নি; এবং এ জন্যই এই ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রয়োজন।
প্রতিবেদন প্রস্তুতের ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে এক বার্তায় জো বাইডেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের উদ্ভব সম্পর্কে দুইটি তত্ত্ব বর্তমানে প্রচলিত। কিন্তু এই দুই তত্ত্বের মধ্যে কোনটি সঠিক তা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি।’
‘আমি এখন গোয়েন্দাদেরকে দ্বিগুন চেষ্টা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণের অনুরোধ জানাচ্ছি, যার মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছনো যায় এবং এ ব্যাপারে ৯০ দিনের মধ্যে আমাকে প্রতিবেদন দিন।’
এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুভাবাপন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলের সহযোগিতা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিতে পারে উল্লেখ করে বার্তায় বাইডেন বলেন, ‘আমরা একটি পরিপূর্ণ, স্বচ্ছ, ও তথ্যপ্রমাণভিত্তিক তদন্ত প্রতিবেদন চাই, যেখানে এই ভাইরাস ও ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও উপাত্ত থাকবে।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দেওয়ার পরই এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির চীন দূতবাস অভিযোগ করে, প্রাণঘাতী এই ব্যাধিটিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে।
এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘চীন সবসময়েই করোনাভাইরাস সম্পর্কে একটি বিস্তৃত গবেষণাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে এখান শঙ্কার ব্যাপার হলো এই যে, রাজনৈতিক কারসাজি ও দোষারোপের খেলা এ রকম একটি স্পর্ষকাতর বিষয়ের তদন্তকাজকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, যা বিশ্বে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় করোনাভাইরাস নামে। শনাক্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাসটি।
উহানে প্রথম যে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে জানতে চীনে গিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল। তবে, ওই গবেষক দল ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে ব্যার্থ হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, চীনের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।
সূত্র: এএনআই
এসএমডব্লিউ