করোনা ভাইরাস মহামারির প্রায় শুরু থেকে বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা, মারা যাওয়া ও সুস্থ হওয়া মানুষের হিসাব রাখছে ওয়ার্ল্ডোমিটার। তাদের তথ্য মতে, ভারতে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের হিসাবে ভারতের পরিস্থিতি আসলে আরও অনেক খারাপ হতে পারে।

‘জাস্ট হাও বিগ কুড ইন্ডিয়াস ট্রু কোভিড টোল বি’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি সর্বোচ্চ খারাপ হয়ে থাকলে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভারত সরকার এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখান করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পরিস্থিতি দৃশ্যমান তাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে সম্ভাব্য যে পরিস্থিতি ভারতে চলমান তাতে ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর পরিস্থিতি যদি সবচেয়ে খারাপ হয়ে থাকে তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভারতে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তবে বৃহস্পতিবার ভারত সরকার এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারত সরকার বলছে, এর কোনো প্রমাণ নেই। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলা হয়েছে এবং তা পুরোপুরি একপাক্ষিক অনুমাননির্ভর।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে করা দাবি প্রত্যাখান করে দিয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি লভ আগারওয়াল বলছেন, ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। কারণ শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সমস্ত তথ্য খুবই স্বচ্ছ উপায়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ভাইরাসের সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে তা খুবই জরুরি। তাছাড়াও কোন পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নিতে হবে তার রুপরেখা তৈরিতেও এর হিসাব রাখা জরুরি ছিল।   

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর শত শত লাশ গঙ্গার স্রোতে ভেসে এসেছে অথবা এর তীরে বালিতে চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ভি কে পালও এ প্রতিবেদেনর তথ্যকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রতিবেদনটিকে প্রমাণহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, যেকোনো দেশেই আক্রান্তের যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে তা সে দেশে আক্রান্ত বড় একটি গোষ্ঠীর অংশ মাত্র।    

যে পদ্ধতিতে নিউ ইয়র্ক টাইমস মৃত্যুর বিশাল এই সংখ্যার তথ্য দিয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় এই কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, এটা স্রেফ অনুমাননির্ভর প্রতিবেদন আর কিছু মানুষের আশঙ্কা। মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রকাশনায় কোনোভাবেই এটি প্রকাশ করা উচিৎ হয়নি। করোনা আক্রান্ত হয়ে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার হিসেব রাখার পদ্ধতি আমাদের আছে।  

তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ, কিছু মৃত্যু হয়েছে যেখানে টেস্ট করা হয়নি কিন্তু হঠাৎ করে অনুমাননির্ভর এ ধরনের তথ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।   

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, করোনা পরীক্ষার ঘাটতি ও তথ্য সংরক্ষণ না করায় ভারতের প্রকৃত অবস্থা বোঝা কঠিন। যেসব দেশে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পথ সুগম সেসব দেশেও করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যার যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে দুই বা তিনগুণ বেশি।

ভারতের চিত্রের বর্ণনায় ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  প্রযুক্তিগত, সাংস্‌কৃতিক ও লজিস্টিক্যাল কারণে ভারতে বহু মানুষের করোনা আক্রান্তের কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার জায়গা নেই, অনেক করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বাড়িতে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মারা যাওয়াদের সংখ্যা সরকারি হিসাবে যুক্ত হচ্ছে না।

পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, করোনা পরীক্ষার সুযোগও কমে এসেছে ভারতে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরিবারের বাকিরা সেটা স্বীকার করতে চাচ্ছেন না। মহামারি শুরুর আগেও ভারতে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর পর প্রায় চারটিরই মেডিকেল রেকর্ড থাকতো না।  

সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য হিন্দু।

এনএফ