ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১১ দিনব্যাপী যুদ্ধের ব্যাপারে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের ক্ষমতার ‘পদ্ধতিগত’ অপব্যবহারের বিষয়েও তদন্ত করবে সংস্থাটি। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটাভুটির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সংস্থাটি এই সিদ্ধান্ত নেয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি দলের প্রস্তাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী বিশেষ অধিবেশনে বসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ।

অধিবেশন শেষে গাজা যুদ্ধ নিয়ে মানবাধিকার পরিষদে ওআইসি ও ফিলিস্তিনের প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাভুটিতে ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট এই সংস্থাটির ২৪টি সদস্য দেশ তদন্তের পক্ষে রায় দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ এবং বাকি ১৪টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে।

ওআইসি ও ফিলিস্তিনের প্রস্তাবনায় ইসরায়েল, গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে স্থায়ী তদন্ত কমিশন (সিওআই) গঠনের কথা বলা হয়েছে। সদস্য দেশগুলোর রায় নিয়ে এটাই হবে প্রথম কোনো স্থায়ী তদন্ত কমিশন গঠনের ঘটনা।

এছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বৈষম্য ও দমন-পীড়ন ছাড়াও চলমান উত্তেজনা ও অস্থিরতা এবং দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ বিলম্বিত হওয়ার কারণও অনুসন্ধান করবে মানবাধিকার পরিষদ।

তবে এই তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা না করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ যে নির্লজ্জভাবে ঘোর ইসরায়েল বিরোধী অবস্থান নিয়েছে, আজকের লজ্জাজনক সিদ্ধান্তটি তার আরও একটি প্রমাণ। সংস্থাটির এই হাস্যকর অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ব্যঙ্গস্বরূপ এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসীরা আরও উৎসাহিত হবে।’

এদিকে গাজা যুদ্ধের তদন্ত করার ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ভূখণ্ডটির ক্ষমতাসীন দল হামাস। নিজেদের কর্মকাণ্ডকে বৈধ প্রতিরোধ উল্লেখ করে ইসরায়েলের শাস্তি নিশ্চিত করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

এদিকে ইসরায়েল গাজায় প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত হয়েছে এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি আর বলেন, ‘যদিও ইসরায়েলের দাবি করছে যে- তাদের হামলায় ধ্বংস হওয়া বেশিরভাগ ভবনেই সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা অবস্থান করছিল এবং সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল, কিন্তু এর কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। তাই ইসরায়েলের এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।’

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম