সাংবাদিক রোমান প্রোতেশেভিচকে আটক করছে পুলিশ। ২০১৭ সালের ছবি

যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ও প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে বিমান অবতরণে বাধ্য করে রোববার ভিন্ন মতাবলম্বী এক সাংবাদিককে আটক করেছিল বেলারুশ। এই ঘটনাকে বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে তুলনা করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। আর এবার বেলারুশের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

সোমবার (২৪ মে) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠকে বসেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা এবং কর্মকর্তারা। সেখানেই বেলারুশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘোষণা করা হয় দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তও।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বেলারুশের কোনো বিমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের এয়ারস্পেস বা আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে বেলারুশের বিমান অবতরণও করতে পারবে না। পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন বিমান সংস্থাও আপাতত বেলারুশে কোনো বিমান চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী বিমানটিকে বোমা হামলার হুমকির কথা বলে গতিপথ বদলে মিনস্কের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য করে বেলারুশ। পরে সাংবাদিক এবং আন্দোলনকর্মী রোমান প্রোতেশেভিচকে গ্রেফতার করে বেলারুশের পুলিশ।

২৬ বছর বয়সী এই সাংবাদিক এথেন্স থেকে আসা রায়ানএয়ারের বিমানটিতে উঠেছিলেন। এটি ভিলনিয়াসের বিমানবন্দরে অবতরণের কিছু আগে বেলারুশের কতৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করে এবং মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে বিমানটিকে মিনস্কের বিমানবন্দরে নিয়ে এসে অবতরণ করায়।

রানওয়েতে নামার সঙ্গে সঙ্গে বিমানে উঠে পড়েন বেলারুশের সেনা সদস্যরা। বোমাতঙ্কের জন্য বিমানটিকে অবতরণ করানো হয়েছে বলে দাবি করা হলেও প্লেনের ভেতর থেকে বেলারুশের এক সাংবাদিক এবং ব্লগার রোমান প্রোতেশেভিচকে গ্রেফতার করা হয়। তার বান্ধবীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমান থেকে নামার সময় সহযাত্রীদের রোমান বলেছিলেন, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

বেলারুশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, বোমা হামলার হুমকি ইস্যুতে ব্যবস্থা নিতে প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দেন, কিন্তু হুমকিটি পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়। শেষে নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাত ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিমানটি লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে অবতরণ করে।

এই ঘটনার পরেই তীব্র নিন্দার মুখে পড়ে বেলারুশের সরকার। কীভাবে একটি যাত্রীবাহী বিমানকে এভাবে অবতরণে বাধ্য করা হলো, তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়ে যায়। তারই জেরে সোমবার ব্রাসেলসে বিশেষ বৈঠকে বসেন ইইউ নেতারা। সেখানে বেলারুশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অরোপসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞা জারির পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিমানসংস্থাগুলো জানাতে শুরু করে, আপাতত তাদের বেলারুশের বিমান বন্ধ থাকবে। বেলারুশের ওপর দিয়ে তাদের বিমান যাতায়াতও করবে না। লুফথানসা, কেএলএম সকলেই নিষেধাজ্ঞা মেনে বিমান না চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে দ্রুত আটককৃত সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের কোনো বিমান বেলারুশের ওপর দিয়ে যাবে না। যুক্তরাজ্যও একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

বেলারুশ অবশ্য দাবি করেছে যে, তাদের কাছে খবর ছিল- হামাস ওই বিমানটিতে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে। বিমানে বোমা রাখা হয়েছে। যদিও হামাসের এক মুখপাত্র বেলারুশের এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

বেলারুশের বিরোধীদলীয় নেতা সেভেতলানা তিখানোভস্কায়া সাংবাদিক প্রোতেশেভিচের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। সেভেতলানা গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। অবশ্য ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

১৯৯৪ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতায় থাকা ৬৬ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো গত বছরের আগস্ট মাসের নির্বাচনের পর থেকে ভিন্নমতাবলম্বীদের মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করছেন। অনেক বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা তিখানোভস্কায়ার মতো অনেকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

টিএম