দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন প্রতিরোধে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কাজ করবে কিনা সেব্যাপারে বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না। সোমবার ব্রিটিশ সরকারের একজন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার বরাত দিয়ে আইটিভি এই খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে তিনি অবিশ্বাস্য রকমের উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তবে আইটিভির এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে রয়টার্স টেলিফোন করলেও কোনও সাড়া দেয়নি ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ।

আইটিভির রাজনৈতিক সম্পাদক রবার্ট পেসটন বলেন, সরকারের একজন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার মতে, দক্ষিণ আফিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে ম্যাট হ্যানককের উদ্বেগের কারণ হলো— তারা এই ধরনটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কিনা সেব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নন। ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া ভাইরাস প্রতিরোধে তৈরি করা হয়েছে। 

মহামারি ডেকে আনা নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন সম্প্রতি শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়। করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে প্রায় তিন ডজন দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার এই নতুন ধরন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া করোনার অন্যান্য ধরনগুলোর চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটি আলাদা। মানবদেহের কোষ সংক্রমিত করতে ভাইরাসের ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ স্পাইক প্রোটিনে করোনার নতুন ধরনটির বেশ কয়েকবার বিবর্তন ঘটেছে।

নতুন এই ধরনটি উচ্চ ভাইরাল লোডের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। এর অর্থ হচ্ছে- রোগীর শরীরে ভাইরাসের বিভিন্ন কণা থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে; যা সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটাতে পারে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনার আগের ধরনের তুলনায় শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটির সংক্রমণের ক্ষমতা ৭০ শতাংশ বেশি।

ভ্যাকসিনগুলো ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরন প্রতিরোধে কাজ করবে বলে তিনি মনে করেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনের ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে কিনা সেটি নিয়ে ‌‌‘বড় প্রশ্ন’ রয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক জন বেল

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ব্রিটেনের সরকারের গঠিত ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের এই সদস্য টাইমস রেডিওকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ধরনটি প্রতিরোধে যদি ভ্যাকসিন কাজ না করে তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। নতুন ভ্যাকসিন তৈরিতে এক বছরের বেশি সময়ের দরকার হবে না। নতুন একটি ভ্যাকসিন পেতে এক মাস অথবা ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

বিশ্বজুড়ে ১৮ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হানা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যে নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে। 

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে।

এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।

এসএস