সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্ত্রী আসমা আল-আসাদ বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন বলে তুরস্কের কিছু গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যমেও নানা ধরনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু আসলেই কি আসমা আল-আসাদ স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করেছেন?

বিদ্রোহীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৮ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছেড়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ রাশিয়ায় পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।তখন থেকে মস্কোতেই রয়েছেন তিনি। সোমবার তুর্কি গণমাধ্যমে প্রকাশিত আসাদের স্ত্রীর বিচ্ছেদের আবেদনের বিষয়ে প্রকাশিত খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার একজন মুখপাত্র।

তুরস্কের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের কাছ থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করেছেন তার স্ত্রী আসমা আল-আসাদ। বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি রাশিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছেন।

তুর্কি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, ‌‌‘‘না, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই।’’ সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্টকে মস্কোতে আটকে রাখা ও তার সম্পত্তি জব্দ করার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। সিরিয়ায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে তাকে সামরিক সহায়তাও দিয়েছে মস্কো। রোববার তুরস্কের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাশিয়ার রাজধানীতে কঠোর বিধি-নিষেধের মাঝে বসবাস করছে বাশার আল-আসাদ পরিবার। সিরিয়ার সাবেক ফার্স্ট লেডি আসমা আল-আসাদ বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন। তিনি লন্ডনে ফিরে যেতে চান। কিন্তু ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেছেন, এসব খবরের সঙ্গে বাস্তবতা মেলে না।

আসমা আল-আসাদ একজন দ্বৈত সিরিয়ান-ব্রিটিশ নাগরিক। এর আগে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আসমা আল-আসাদকে ব্রিটেনে ফিরতে দেওয়া হবে না। চলতি মাসের শুরুর দিকে পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় মন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছিলেন, ‘‘আমি এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, তিনি (আসমা) একজন নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং যুক্তরাজ্যে তাকে স্বাগত জানানো হবে না।’’

তিনি বলেন, আসাদ পরিবারের কোনও সদস্য যাতে ‘‘যুক্তরাজ্যে স্থান না পান’’ তা নিশ্চিত করার জন্য আমার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো। গত সপ্তাহে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাশার আল-আসাদ বলেন, সিরিয়া ছাড়ার বিষয়ে তার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। তবে মস্কোর অনুরোধে তাকে রাশিয়ান একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে বিমানে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের অ্যাক্টন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন আসমা আল-আসাদ। সেখানে সিরীয় বাবা-মায়ের পরিবারে বেড়ে ওঠেন তিনি। পরে ২০০০ সালে ২৫ বছর বয়সে সিরিয়ায় চলে যান তিনি। বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরে তাকে বিয়ে করেন আসমা।

সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি হিসেবে ২৪ বছর ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আসমা আল-আসাদ। ২০১১ সালে বিখ্যাত সাময়িকী ভোগের প্রতিবেদনে জায়গা পান তিনি। ভোগ সেই সময় তাকে ‘‘মরুভূমির বুকে এক গোলাপ’’ বলে অভিহিত করে। যদিও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে ভোগ তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়।

সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি।

এসএস