বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষের পর হামা শহর থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এর মাধ্যমে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পোর পর দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর হামাও নিজেদের দখলে নিলো।

এটিকে চলমান গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আরও একটি বড় পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী হামা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার পর দেশটির দ্বিতীয় বড় শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সিরীয় বিদ্রোহীরা। ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানি হামাতে “বিজয়” ঘোষণা করেছেন এবং “কোনও প্রতিশোধ” নেওয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এর আগে, এইচটিএস যোদ্ধারা এবং তাদের সহযোগীরা হামা কেন্দ্রীয় কারাগার দখল করে এবং ভয়ঙ্কর যুদ্ধের মধ্যেই বন্দিদের ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শহরের বাইরে সেনা মোতায়েন করেছে।

হামা শহরটি ১০ লাখ লোকের আবাসস্থল এবং এটি আলেপ্পো থেকে ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। অতীতে প্রেসিডেন্ট আসাদ তার বিরোধীদের পরাস্ত করতে রাশিয়া ও ইরানের ওপর নির্ভর করতেন। কিন্তু উভয় মিত্র তাদের নিজস্ব বিষয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি নিজেই এখন বিদ্রোহীদের কাছে পরাস্ত হচ্ছেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রধান ও বৃহত্তম শহর আলেপ্পো অবরোধ করার কয়েক দিন পরেই হামা দখলে নিলো। ২০১৬ সালের পর এটাই ছিল আলেপ্পোর ওপর প্রথম বড় আঘাত; ইরান-সম্পৃক্ত মিলিশিয়া ও রুশ বিমান বাহিনী সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলাকালে শহরের পূর্ব অংশ থেকে অতীতে বিদ্রোহী দলগুলোকে বিতাড়িত করেছিল।

তবে ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম ও তুরস্কের সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি নিয়ে গড়ে উঠেছে বিদ্রোহী দলগুলো। ২০১১ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধকে উস্কে দিয়েছে বিদ্রোহীদের আলেপ্পো ও হামা দখল। আসাদের মিত্ররা নিজেরাই যুদ্ধে জর্জরিত ও ব্যস্ত, যেমন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে।

রাজধানী দামেস্কের প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে হামা শহরটি অবস্থিত, অর্থাৎ আলেপ্পো ও দামেস্কের মাঝখানে। ১৯৮২ সালে এই শহরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের (বর্তমান প্রেসিডেন্টের বাবা ও পূর্বসূরি) বিরুদ্ধে ইসলামপন্থি অভ্যুত্থান ঘটেছিল।

সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংস দমন-পীড়নের মাধ্যমে সেই অভ্যুত্থানের অবসান হয়েছিল। সেই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।

প্রসঙ্গত, সিরিয়ার হামা অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের মাধ্যমেই আলেপ্পোর সঙ্গে রাজধানী দামাস্কের সংযোগ স্থাপন সম্ভব। ফলে আসাদ সরকারের কাছ থেকে হামা দখল করে নেওয়াটা বিরাট এক বিজয়। অন্যদিকে হামা দখলে নেওয়ায় এবার দামেস্কের খুব কাছে পৌঁছে যেতে পারবে বিদ্রোহীরা।

টিএম