পাকিস্তানে প্রতিদিন বাড়ছে নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব সৌর বিদ্যুতের চাহিদা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে বিশ্বের যেসব দেশে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, সেসবের মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম।

এর কৃতত্ব অবশ্য অনেকাংশেই চীনের সাশ্রয়ী মূল্যের সোলার প্যানেলের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পাকিস্তানে সৌর বা সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ পৌঁছাবে ১৭ গিগা ওয়াটে, যা দেশটির মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের এক তৃতীয়াংশ।

মাত্র দু’ থেকে দেড় বছরের মধ্যে ঘটেছে এই উল্লম্ফন। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি বিষয়ক ব্রিটিশ থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা অ্যাম্বারের বিশ্লেষক ডেভ জোনস জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, “আমার জানামতে, পাকিস্তানে যে গতিতে সোলার প্যানেল বসানো এবং সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে, বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন দেখা যায়নি।

ডয়েচে ভেলের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাকিস্তানের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ঘাটতি, ঘন ঘন লোডশেডিং, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দুর্বল অবকাঠামো এবং অতিরিক্ত দামের কারণে দেশজুড়ে ধনী-দরিদ্র সবাই ঝুঁকছেন সৌর বিদ্যুতের দিকে।

আর এক্ষেত্রে তাদের প্রধান সহায় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন চীনা কোম্পানির তৈরি সাশ্রয়ী সোলার প্যানেল। ফলে এখন পাকিস্তানজুড়ে ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার ছাদে সৌর প্যানেলের সমারোহ।

ভয়াবহ তাপপ্রবাহে জীবনরক্ষাকারী

প্রচণ্ড গরমে টানা ২৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাফকাত হোসেনের মা। নিজের ঘরে মাকে মৃত্যুশয্যায় দেখে শাফকাত সিদ্ধান্ত নেন—আর দেরি করার সুযোগ নেই। সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা এখনই দরকার।

গত ২৭ নভেম্বর জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে শাফকাত জানান, পাকিস্তানে সৌরবিদ্যুতের বিকল্প নেই। বলেন, 'যখন বিদ্যুৎই নেই তখন আবার কিসের এসি? পাখা ঘুরছে না। ফ্রিজ থেকে একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে খাবো, সেই সুযোগও নেই।'

মা-বাবা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ইসলামাবাদে থাকেন শাফকাত। অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় মায়ের অসুস্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি ছোটেন সোলার প্যানেলের দোকানে। এক সহকর্মীর পরামর্শে কিনে নেন চীন থেকে আসা কম দামের সোলার প্যানেল।

এখন শাফকাতকে বিদ্যুৎ নিয়ে ভাবতে হয় না। বিদ্যুৎ বিল কমেছে ৮০ শতাংশ। এখন নিজেকে অনেকটা নিরাপদ ভাবছেন তিনি।

সৌর বিদ্যুতের জেরে কি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ভুগবে?

পাকিস্তান ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে ৬০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভাবছে।  তবে এজন্য দেশটিকে মূল্যও দিতে হবে।

কারণ ইতোমধ্যে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্তত দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পেতে সোলার প্যানেলের দিকে ঝুঁকে পড়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ কমে গেছে। ক্ষতি পোষাতে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। উৎপাদনকেন্দ্রগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারছে না যে কখন কী পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন।

এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পাকিস্তান সরকার সোলার প্যানেল বিক্রির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেবে সেই সুযোগও নেই বলে মনে করেন ডেভ জোসন।

সৌর বিপ্লব

পাকিস্তানে 'সৌর বিপ্লব' সম্ভব হয়েছে চীনের সহজলভ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। গত ১৫ বছরে ইসলামাবাদ সোলার প্যানেলের দাম কমিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ সোলার প্যানেল উৎপাদক চীন প্রতিবেশী দেশটিতে বেশ সস্তায় প্যানেল রপ্তানি করছে।

গত চার দশকে পাকিস্তানে সবচেয়ে দামি সোলার প্যানেল এখন সবচেয়ে সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।

তবে চীনের সাশ্রয়ী প্রযুক্তির কারণে সৌর বিপ্লবের দেশের তালিকায় পাকিস্তানই একমাত্র দেশ নয়। চলতি বছর এই তালিকায় উঠে এসেছে সৌদি আরব, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

এসএমডব্লিউ