ভারতীয় ও হিন্দু বলে বাংলাদেশে মারধর করেছে, দাবি কলকাতার যুবকের
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ঘুরতে এসে মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ভারতীয় এক যুবক। দেশটির পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বাসিন্দা ওই যুবকের দাবি, ভারতীয় ও হিন্দু হওয়ার কারণে তাকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে।
গত মাসের শেষের দিকে ওই ভারতীয় যুবক বাংলাদেশে এসেছিলেন। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে রোববার (১ ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বিজ্ঞাপন
কলকাতার ওই যুবকের নাম সায়ান ঘোষ। তার দাবি, তিনি ভারতের একজন হিন্দু হওয়ার কারণে তাকে ঢাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মারধর করেছে। কলকাতার উত্তর প্রান্তের বেলঘরিয়ার বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী সায়ান গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং নিজের এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। ঢাকার ওই পরিবার তাকে তাদের নিজের ছেলের মতোই নিজেদের কাছে রেখেছিল।
সায়ান ঘোষ রোববার পিটিআইকে বলেন, “আমি এবং আমার বন্ধু গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হয়েছিলাম। তবে আমার বন্ধুর বাড়ি থেকে প্রায় ৭০ মিটার দূরে চার-পাঁচজন যুবকের একটি দল আমাকে দাঁড় করায়। তারা আমাকে আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং আমি তাদেরকে ভারত থেকে এসেছি এবং একজন হিন্দু বলে জানালে তারা আমাকে লাথি ও ঘুষি মারতে শুরু করে। এমনকি তারা আমার বন্ধুকেও আক্রমণ করে যে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।”
তার দাবি, “এমনকি তারা ছুরি দেখিয়ে আমার মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। কোনও পথচারী আমাদের উদ্ধার করতে আসেনি। কাছাকাছি কোনও পুলিশ ছিল না। ঘটনার পরে, আমরা শ্যামপুর থানায় যাই কিন্তু তারা কোনও অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এর পরিবর্তে, তারা আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিল- কেন আমি বাংলাদেশে এসেছি? আমি তাদেরকে আমার পাসপোর্ট এবং ভিসা দেখানোর পর এবং আমার বন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার পর তারা সন্তুষ্ট হয়ে আমার ক্ষত স্থানে চিকিৎসা নিতে বলে।”
ঘোষ আরও দাবি করেন, তিনি দুটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গেলেও তারা স্বাস্থ্যসেবা দিতে অস্বীকার করে এবং অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যান। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর আমি সেখানে চিকিৎসা পেয়েছিলাম। আমার কপালে ও মাথায় বেশ কিছু সেলাই করা হয়েছিল এবং এমনকি আমার মুখেও আঘাত ছিল। তিনি এখনও আতঙ্কিত বলেও দাবি ঘোষের।
তবে গত ৩০ নভেম্বর কলকাতায় ফিরে আসার পর তিনি বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কারণ দর্শনা সীমান্ত ফাঁড়িতে ইমিগ্রেশন বা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে তার অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি।
তিনি আরও দাবি করেন, “আমি আমার এবং আমার বন্ধুর পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে যেতে ভয় পেয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন
এনডিটিভি বলছে, ঘটনার পর তিন দিন বন্ধুর বাড়িতে থাকার পর গত ২৯ নভেম্বর সায়ান ঘোষকে নিয়ে তার বন্ধু রেলস্টেশনে নিয়ে যায় এবং দর্শনার জন্য ট্রেনে ওঠে। এরপর দর্শনা থেকে ভারতের গেদে পার হয়ে বেলঘরিয়া পৌঁছানোর জন্য শিয়ালদহগামী লোকাল ট্রেনে ওঠেন তিনি।
বিষয়টির রাজনীতিকরণ না করার কথা জানিয়ে ভারতীয় এই যুবক বলেন, তিনি কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনে অভিযোগ জানাতে চান।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল সম্প্রদায়ের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অভিযোগ দায়ের করা হলে তারা সেটি দেখবে।
টিএম