দিল্লিতে দুই মাসে দুই বিস্ফোরণে দিশাহারা পুলিশ, পাচ্ছে না কিনারা
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির রোহিণী জেলার প্রশান্ত বিহারে গত দুই মাসে অন্তত দু’টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে গত ২০ অক্টোবর দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের একটি স্কুলের কাছে। আর অন্য বিস্ফোরণটি ঘটেছে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালের দিকে প্রশান্ত বিহারের একটি চলচ্চিত্র থিয়েটারের কাছে। এই দুই বিস্ফোরণের ঘটনায় দিল্লি পুলিশের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কে বা কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তার কোনও কূল-কিনারা করতে পাচ্ছে না দিল্লি পুলিশ।
প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনও হতাহত না হলেও বৃহস্পতিবার সকালের দিকে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে তাতে একজন অটোচালক আহত হয়েছেন। দু’টি ঘটনাতেই কাউকে শনাক্ত কিংবা আটক করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু উভয় ঘটনার পরপরই বিস্ফোরণস্থল থেকে সাদা পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশের সূত্রগুলো বলেছে, বিস্ফোরণের সাথে কারা জড়িত, তা এখনই ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে উভয় ঘটনাতেই মিল রয়েছে।
• পিভিআর মাল্টিপ্লেক্সের বিস্ফোরণ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র এস কে ত্যাগী বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা ৪৭ মিনিটের দিকে পিভিআর মাল্টিপ্লেক্সের কাছের একটি মিঠাইয়ের দোকানের পাশে বিকট বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে টেলিফোনে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। অগ্নিনির্বাপক কর্মী, স্নাইফার ডগ স্কোয়াগ ও বোমা নিস্ক্রিয়কারীসহ মোট চারটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
বিস্ফোরণের মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে ধূসর রঙের একটি হোন্ডা সিটি প্রাইভেট কার পার্ক করে রাখা হয়েছে। এর পাশ দিয়ে একটি সাদা মোটরসাইকেল চলে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে বিস্ফোরণের দৃশ্যটি ক্যামেরার লেন্সের বাইরে ছিল। যে কারণে সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। ওই সময় প্রাইভেট কারের পাশে পার্ক করে রাখা অন্যান্য গাড়িতে চুরি-বিরোধী সংকেত বাজতে শুরু করে।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা ধোঁয়ার বিশাল আস্তরণে ঢেকে গেছে পুরো এলাকা। আশপাশের উন্মুক্ত বাজারেও এই ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া এলাকায় ডমিনো'স পিৎজার একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। যা ধুলায় ঢেকে গেছে।
এই বিস্ফোরণের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র এস কে ত্যাগী বলেছেন, পিভিআর মাল্টিপেক্সের বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে সন্দেহভাজন হিসেবে পাওয়া যায়নি।
• সিআরপিএফের স্কুলের বিস্ফোরণ নিয়ে যা বলছে পুলিশ
গত ২০ অক্টোবর প্রশান্ত বিহারের সিআরপিএফের স্কুলের কাছের বিস্ফোরণটি ঘটেছিল সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণের ঘটনার সাথে এই বিস্ফোরণের সময়ের ব্যবধান প্রায় চার ঘণ্টা।
২০ অক্টোবর ছিল রোববার। সেদিনের বিস্ফোরণের ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। বিস্ফোরণে স্কুলের সীমানা প্রাচীর উড়ে যায় এবং আশপাশের দোকান ও একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকের বিস্ফোরণের পরপরই সেখানে পুলিশের ফরেনসিক দল ও বোমা নিস্ক্রিয়কারী স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়া ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) একটি দল ও কমান্ডোদেরও মোতায়েন করা হয়। ওই এলাকায় আরও বিস্ফোরক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য ড্রোনও মোতায়েন করা হয়েছিল।
আজ পিভিআর মাল্টিপ্লেক্সের কাছের বিস্ফোরণ স্থল থেকেও একই ধরনের সাদা পাউডার উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিস্ফোরণের সময় ওই এলাকায় সচল থাকা মোবাইল ফোন শনাক্ত করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।
• রাজনৈতিক বিবাদ?
বৃহস্পতিবার সকালের বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দায়ী করেছেন অতিশী। দিল্লি পুলিশ অমিত শাহর কার্যালয়ে রিপোর্ট করে। অতিশী বলেন, বিস্ফোরণের এই ঘটনা রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির চিত্র তুলে ধরছে।
দিল্লির সাব্কে মুখ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিজেপির বিরুদ্ধে রাজধানীর বাসিন্দাদের মাঝে ‘‘ক্রমবর্ধমান ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার ধারণা’’ ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সমালোচনা করেছেন।
আগামী বছর দিল্লির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে আম আদমি পার্টি ও বিজেপি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে।
• সিআরপিএফ স্কুলে বোমা হামলার হুমকি
গত ২০ অক্টোবর দিল্লিতে প্রথম বিস্ফোরণের একদিন পর ভারতজুড়ে সিআরপিএফের সব স্কুলে বিস্ফোরণের হুমকি দেওয়া হয়। ই-মেইলে দেওয়া ওই হুমকির পর সিআরপিএফের সব স্কুলে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়। দিল্লিতে সিআরপিএফের দু’টি স্কুল আছে।
তবে ই-মেইলে হুমকি দেওয়া হলেও সিআরপিএফের কোনও স্কুলে আর বিস্ফোরণ ঘটেনি। যদিও ওই সময় দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শত শত ফ্লাইটে বোমা হামলার মিথ্যা হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
এসএস