মিয়ানমারের লাওয়া ইয়াংয়ের একটি ফাঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির এক বিদ্রোহী যোদ্ধা। ছবিটি ২০১৮ সালের ২০ মার্চ তোলা

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এই শহরটি দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীন সীমান্তে অবস্থিত। মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য এটি বড় একটি ধাক্কা।

বুধবার (২৭ নভেস্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চীন সীমান্তে উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যনগরী দখল করে লাভজনক খনিজ পদার্থ রেয়ার আর্থ উত্তলনের একটি কেন্দ্রর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আর এটিকে দেশটির জান্তা সরকারের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।

কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির কাছে কানপাইতির আপাত পতনের ফলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে মাত্র একটি সীমান্ত শহর হিসেবে মিউজের নিয়ন্ত্রণ থাকল। এর ফলে খনিগুলোর সম্ভাব্য মুনাফা থেকে তারা বঞ্চিত হবে।

এই খনি চীনকে রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে, যা বৈদ্যুতিক মোটর এবং বায়ু টার্বাইন, পাশাপাশি উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র এবং অনেক ধরনের ইলেকট্রনিক্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কেআইএ’র মুখপাত্র কর্নেল নাও বু বা সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র থেট সুই কেউই মন্তব্যের জন্য একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও সাড়া দেননি। তবে বেশ কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যম গত সপ্তাহে কানপাইতির পতনের কথা জানিয়েছে।

চলমান গৃহযুদ্ধ এবং সামরিক বিধিনিষেধের কারণে এসব অঞ্চলে সাংবাদিকদের ভ্রমণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা টেলিফোনে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরা ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, কেআইএ’র এক সদস্য পর্বতের মধ্য দিয়ে চীনে যাওয়ার সুড়ঙ্গে কেআইএ’র পতাকা উঁচিয়ে রেখেছেন। এই ভিডিও স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। অন্যান্য ক্লিপে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেখা যায়, যেগুলো কেআইএ দখল করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করে। এর ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর দীর্ঘ-প্রতিষ্ঠিত সশস্ত্র মিলিশিয়াদের সাথে সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই শুরু হয়। মূলত আরও স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে এসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী গত কয়েক দশক ধরে লড়াই করছে।

এরপর তিনটি শক্তিশালী মিলিশিয়ার একটি জোট ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবরে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করার পর তাতমাদাও নামে পরিচিত এক সময়ের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গত বছর বেশ কয়েকটি নজিরবিহীন পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে চীন সীমান্তের পূর্বাঞ্চলে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনে।

এরপর থেকে জাতিগত ভিত্তিতে সংগঠিত অন্যান্য মিলিশিয়ারা এতে যোগ দেয়, যার মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাচিনের কেআইএ’ও রয়েছে।

টিএম