পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী-সমর্থকদের ইসলামাবাদ অভিমুখী পদযাত্রা ব্যাপক সহিংস আকার ধারণ করেছে। এই সহিংসতার ঘটনায় পিটিআইয়ের ‘‘গোপন নেতৃত্ব’’ কর্মী-সমর্থকদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে বলে মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি দাবি করেছেন।

তিনি বলেছেন, ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত দলটি বর্তমানে ‘‘গোপন নেতৃত্ব’’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যদিও দলটির কিছু নেতা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক।

ইসলামাবাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ডি-চক এলাকায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের এই নিরাপত্তা প্রধান বলেন, ‘‘পুরো পিটিআই নেতৃত্ব রক্তপাত চায় না এবং আলোচনা করতে ইচ্ছুক। কিন্তু দলটির একটি ‘‘গোপন নেতৃত্ব’’ দূরে বসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।’’

দেশটির এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘গোপন হাত’’ সফল হবে না। কারণ এই গোপন হাতই বিশৃঙ্খলার মূল এবং তাদের আলাদা এজেন্ডা রয়েছে। দেশটির সাবেক ক্ষমতাসীন দল পিটিআইকে রক্তপাতের দিকে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এ সময় তিনি খাইবার পাখতুনখোয়ার সরকারের বিরুদ্ধে পিটিআইয়ের বিক্ষোভকারীদের কাঁদানে গ্যাসের শেল সরবরাহ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়ার সরকারের সরবরাহ করা কাঁদানে গ্যাসের শেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে পিটিআই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, সুনির্দিষ্ট বিচার বিবেচনার ভিত্তিতে পুলিশকে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বিক্ষোভকারীদের সামলানোর সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শকের। আমরা প্রতিবাদকারীদের সাংজানিতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সময়ক্ষেপণ করে সংলাপের কথা বলেছিল। এখন দলটির একাংশ সংলাপে বসতে চাইলেও অন্য পক্ষ বিরোধিতা করছে।

এর আগে, সোমবার পিটিআইয়ের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে পাক রেঞ্জার্সের অন্তত তিন কর্মী ও পুলিশের এক সদস্য নিহত হন বলে জানিয়েছেন দেশটির এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়াও সংঘর্ষে রেঞ্জার্স ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পাঞ্জাব পুলিশের আরও কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে মোকাবিলায় সহায়তা করার অনুমতি দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রয়োজনে কারফিউ জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে পাকিস্তানের একাধিক নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে।

• ডি-চকের দখল কেন চায় পিটিআই?

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা আলী আমিন গান্দাপুর পিটিআইয়ের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকদের ডি-চকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

ইসলামাবাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত রেড জোনের একটি এই ডি-চক। পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গোলচত্বরকে।

ডি-চক এলাকায় দেশটির সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দেশটির সংসদ ভবন, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় পরিষদ ভবন ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাস এবং হাইকমিশন রয়েছে।

ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ডি-চককে দেশটিতে অনেকেই ‘‘ডেমোক্রেসি চক’’ নামেও বর্ণনা করে থাকেন। স্থানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদের প্রধান চত্বর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ওই স্থানটিতে প্রায় এক মাস ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ডি-চক থেকে প্রায় ৫৫০ মিটার দূরে জড়ো হচ্ছেন; যেখানে তিন স্তরের কনটেইনারের স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

এসএস