পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবারপাখতুনখাওয়া প্রদেশে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও তাণ্ডবে কমপক্ষে আরও ২১ জন নিহত হয়েছেন। প্রদেশটির কুররাম জেলায় রাতের আঁধারে সংঘাত, অগ্নিসংযোগ এবং বন্দুকযুদ্ধে তারা প্রাণ হারান।

মূলত দেশটির এই প্রদেশে শিয়া যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীদের হামলায় ৪৩ জনের প্রাণহানির পর নতুন সহিংসতায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। এতে করে গত তিন দিনের সহিংসতায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৬৪ জনে পৌঁছেছে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শনিবার এই সহিংসতার ঘটনার সময় প্রাদেশিক আইনমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মুখ্য সচিব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া সরকারের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশটির অশান্ত ওই জেলায় উপস্থিত ছিলেন।

কর্মকর্তাদের মতে, সংঘাতের সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গুলিবর্ষণ করে, সরকারি বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর করে, মার্কেটে দোকানপাট লুট করে এবং চেকপয়েন্ট, বাড়ি ও দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেখানে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা রয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে পারাচিনার জেলা সদর থেকে সশস্ত্র দলগুলো লোয়ার কুররামের বাগান বাজার ও আশপাশের গ্রামে হামলা চালায়। একপর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় শুরু হয, যার ফলে ৩০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লোয়ার কুররামের বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলতে থাকে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপার কুররাম থেকেও মাঝেমধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে, তবে সেখানকার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুদ্ধরত পক্ষগুলো নারী ও শিশুসহ অনেককে জিম্মি করেছে এবং নিহতদের লাশ হস্তান্তর করতে অস্বীকার করছে বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

খাইবারপাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আলী সাইফ বলেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং মৃতদেহ ও আহতদের উদ্ধারের জন্য আলোচনা চলছে। হামলার কারণে স্থানীয়রা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে থাল ও হাঙ্গুর নিকটবর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে শনিবার আইনমন্ত্রী আফতাব আলম আফ্রিদি, কেপি পুলিশ প্রধান আখতার হায়াত খান, মুখ্য সচিব নাদিম আসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার সাইফ, কোহাট কমিশনার এবং আঞ্চলিক পুলিশ কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে করে কুররামে পৌঁছেছেন।

তবে অসমর্থিত বেশ কিছু মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং কথিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কেপি গভর্নরের কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিও জারি করা হয়েছে। তবে হামলার কথা অস্বীকার করেছেন আইনমন্ত্রী আফতাব আলম আফ্রিদি।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার কুররাম জেলায় পুলিশি পাহারায় ভ্রমণের সময় শিয়া মুসলিমদের দুটি যাত্রীবাহী ভ্যানে হামলা চালায় সশস্ত্র বন্দুকধারীরা। এই হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত ও ১১ জন আহত হন। আহতদের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে শনিবার কর্মকর্তারা জানান।

বৃহস্পতিবারের ওই হামলার প্রতিশোধে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিয়া মুসলমানরা কুররাম জেলার সুন্নি অধ্যুষিত কয়েকটি স্থানে হামলা চালান। অতীতে খাইবারপাখতুনখাওয়ার এই জেলা আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ছিল; যেখানে বছরের পর বছর ধরে চলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

প্রসঙ্গত, সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে উপজাতীয় ও পারিবারিক বিবাদের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। দেশটিতে শিয়া সম্প্রদায় সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

টিএম