২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শিরশ্ছেদের মাধ্যমে রেকর্ড ১০১ জন বিদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্ডকর করেছে সৌদির সরকার। এই সংখ্যা ২০২২ এবং ২০২৩ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশিদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।

নিজস্ব টালি থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। শিরশ্ছেদের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২১ জন পাকিস্তানের, ২০ জন ইয়েমেনের, ১৪ জন সিরিয়ার, ১০ জন নাইজেরিয়ার, ৯ জন মিসরের, ৮ জন জর্ডানের, ৭ জন ইথিওপিয়ার, ৩ জন সুদানের, ৩ জন ভারতের এবং ৩ জন আফগানিস্তানের নাগরিক ছিলেন। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, ইরিত্রিয়া ও ফিলিপাইনেরও একজন করে নাগরিক রয়েছেন এই তালিকায়।

এছাড়া বার্লিনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইউরোপিয়ান-সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসও (ইএসওএইচআর) এক বিৃবতিতে জানিয়েছে যে চলতি বছর রেকর্ড সংখ্যক বিদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদির সরকার।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অধিকাংশই মাদক চোরাচালানের দায়ে অভিযুক্ত। এএফপির টালি বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাদক চোরাচালানের অপরাধে মোট ৯২ জন শিরশ্ছেদের শিকার হয়েছেন সৌদিতে, তাদের মধ্যে ৬৯ জনই বিদেশি।

২০১৯ সালে তিন বছরের জন্য মাদক চোরাচালানের দায়ে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সৌদি সরকার। সেই আদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালে। ওই বছর থেকে এ ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড ফের চালু করেছে দেশটি।

তবে ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত যতসংখ্যক মৃতুদণ্ড কার্যকর হয়েছে সৌদিতে, তা একটি রেকর্ড। এএফপির টালি অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৭৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দেশটিতে। এর আগে ২০২২ সালের গোটা বছরে ১৯৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল সৌদিতে। এতদিন পর্যন্ত এটিই এক বছরে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রেকর্ড ছিল।

ইউরোপিয়ান-সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের আইন বিভাগের পরিচালক ত্বাহা আল হাজি এএফপিকে জানিয়েছেন, সৌদির বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন বৈশিষ্টের কারণে বিদেশি নাগরিকরা প্রায়েই ন্যায়বিচার বঞ্চিত হন। দেশটিতে বিদেশিরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন বলেও উল্লেখ করেছেন ত্বাহা আল হাজি।

“বিদেশিরা যে শুধু মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতেই থাকেন না, বরং গ্রেপ্তারের পর থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির আগ পর্যন্ত একের পর এক নিগ্রহ-সহিংসতার শিকার হন তারা”, এএফপিকে বলেছেন ত্বাহা আজিজ।

সৌদির ক্রাউন প্রিন্স এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান ২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হত্যা মামলার আসামি এবং জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যান্য অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের প্রথা রোহিত করা হবে; কিন্তু বাস্তবে তার সেই বক্তব্যের প্রতিফলন তেমনভাবে চোখে পড়ছে না।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কাজ করছে রিপ্রাইভ নামের একটি এনজিও। রিপ্রাইভের প্রধান নির্বাহী জিদ বাসিওনি জানিয়েছেন, চলতি বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত সৌদিতে শিরশ্ছেদের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

“এটা রীতিমতো নজিরবিহীন। গত কয়েক দশকের ইতিহাসে সৌদিতে এক বছরে এত সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রেকর্ড নেই।”

সূত্র : এএফপি/এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড

এসএমডব্লিউ