ট্রাম্পের জন্য ‘সতর্কভাবে’ অপেক্ষায় জাতিসংঘ
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্বেগ বোধ করছে জাতিসংঘ। এ উদ্বেগের প্রধান কারণ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শাসনামলে বিশ্বের বৃহত্তম এই সংস্থাটির প্রতি তার ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব।
জাতিসংঘের একজন এশীয় কূটনীতিবিদ রয়টার্সের কাছে এ ব্যাপারটি স্বীকার করে বলেছেন, “অতীত রেকর্ড যদি পুনর্বিবেচনা করা হয়, তাহলে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে জাতিসংঘের উদ্বেগের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, এই মেয়াদে এমনটা ঘটবে না। আমরা আরও প্রত্যাশা করছি যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে পৃথিবীতে জাতিসংঘের চেয়ে বড় এবং শ্রেয়তর আর কোনো বৈশ্বিক মঞ্চ নেই।”
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। বৈশ্বিক এ সংস্থাটি চলে মূলত সদস্যরাষ্ট্রগুলোর চাঁদার ভিত্তিতে। জাতিসংঘের বৃহত্তম দাতা যুক্তরাষ্ট্র এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা চীন। উভয় রাষ্ট্র জাতিসংঘের মূল বাজেটের ২২ শতাংশ এবং শান্তিরক্ষা মিশনের ২৭ শতাংশ সরবরাহ করে।
এর আগে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদার পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ হ্রাস করেছিলেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের দুই অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্টে অর্থপ্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প।
এর ফলে অর্থসংকটে পড়তে হয়েছিল জাতিসংঘকে। সংস্থাটির অনেক বৈশ্বিক কর্মসূচিও মাঝপথে থেমে গিয়েছিল।
বস্তুত ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান, সে সময় জাতিসংঘের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৬০ কোটি ডলার জাতিসংঘের নিয়মিত বাজেট খাতের এবং ২০০ কোটি ডলার সংস্থাটির শান্তিরক্ষা মিশনের। পরে সেই বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করতে হয়েছিল জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনকে।
এদিকে জো বাইডেন প্রশাসনও জাতিসংঘের চাঁদা বকেয়া রেখেছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের কাছে মূল বা নিয়মিত বাজেট খাতে ৯৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং শান্তিরক্ষা মিশন খাতে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওনা রয়েছে জাতিসংঘের।
এক কর্মকর্তা বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই দেরিতে চাঁদা পরিশোধ করে। এ কারণে বাইডেন প্রশাসনের কাছে এই অর্থ পাওনা থেকে গেছে। জো বাইডেন হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার আগে ওয়াশিংটন এই চাঁদা পরিশোধ করবে— এমন সম্ভাবনা খুব কম।”
তবে জাতিসংঘের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরিচালক রিচার্ড গোয়ানের অনুমান, যেহেতু ট্রাম্প এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ব্যাপারে জাতিসংঘের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এবার তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জাতিসংঘের প্রস্তুতি থাকা উচিত এবং তা রয়েছেও।
রয়টার্সকে গোয়ান বলেন, “২০২৪ সালের পুরো বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে এটি চাওর ছিল যে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জিততে চলেছেন। তাই বাজেট সমস্যা ঘটলে কীভাবে তা মেটাতে হবে— সে বিষয়ক পরিকল্পনা-প্রস্তুতি জাতিসংঘের থাকার কথা এবং আমার ধারণা, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে।”
বুধবার এ ইস্যুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্তেফানে দুজারিক বলেন, “আমি (এ প্রসঙ্গে) আগেভাগেই কিছু বলতে চাই না। আমি শুধু বলব, জাতিসংঘ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যেভাবে কাজ করে আসছে, তা সবসময় অব্যাহত থাকবে।”
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ