ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন কারা?
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর কিছুদিন পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন তিনি, গঠন করবেন নতুন মন্ত্রিসভা।
কিন্তু কারা ঠাঁই পাবেন সেই মন্ত্রিসভায়? রিপাবলিকান পার্টি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নতুন মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য সদস্যদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এই তালিকার সদস্যরা হলেন—
বিজ্ঞাপন
স্কট বেসেন্ট, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর পদের জন্য সবার আগে যার নাম আছে, তিনি স্কট বেসেন্ট। বেশ কয়েক বছর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা বেনেট বর্তমানে ট্রাম্পের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ট্রাম্পের নির্বাচনের প্রচারাভিযানে বড় অঙ্কের চাঁদাও দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনী ইশতিহার ও প্রচারণা সভায় বিভিন্ন সময়ে দেশের কর সংস্কারের যে প্রসঙ্গ তুলেছেন ট্রাম্প, সে বিষয়ে তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন স্কট। এছাড়া তিনি ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দর্শনের একজন মুগ্ধ সমর্থক।
জন পলসন, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
জন পলসন একজন ধনকুবের এবং হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের একজন বড় অর্থদাতা। এর আগে বিভিন্ন সময় পলসন তার সহযোগীদের বলেছেন যে, ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বা অর্থমন্ত্রনালয়ের প্রধান হতে আগ্রহী।
ল্যারি কুডলো, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের বিজনেস নেটওয়ার্ক নামের একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ল্যারি কুডলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনীতি কাউন্সিলের পরিচালক ছিলেন। যেহেতু দেশের প্রধান সরকারি অর্থনৈতিক সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা কুডলোর রয়েছে, তাই তাকেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক।
রবার্ট লাইটহিজার, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত শাসন আমলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করা রবার্ট লাইটহিজার ট্রাম্পের একান্ত বিশ্বস্ত হিসেবে সুপরিচিত। বেসেন্ট বা পলসনের মতো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তার নেই, তবে তিনিও রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অর্থমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে।
হাওয়ার্ড লুটনিক, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত কমিটির কো-চেয়ার হাওয়ার্ড লুটনিকও হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে দীর্ঘদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অর্থনৈতিক পরিষেবা সংস্থা ক্যান্টর ফিটজেরাল্ডের শীর্ষ নির্বাহী ছিলেন। নিউইয়র্কে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা লুটনিক রাজনীতিবিদ হিসেবেও রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে বেশ জনপ্রিয়।
রিচার্ড গ্রেনেল, সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। তবে এর বাইরেও ‘প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা’ নামে একটি পদ রয়েছে দেশটির সরকারে। এ পদে থাকা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। রিপাবলিকান পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণের পর তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে পারেন রিচার্ড গ্রেনেল। ট্রাম্পের গোটা নির্বাচনী প্রচারাভিযানের অন্যতম নীতি-নির্ধারক ছিলেন তিনি।
রবার্ট ও’ব্রায়েন, সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন প্রশাসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর স্থান অনেক উচ্চ। বলা হয়ে থাকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার হচ্ছেন মার্কিন প্রশাসনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
ধারণা করা হচ্ছে, রিপাবলিকান পার্টির নেতা রবার্ট ও’ব্রায়েনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন ও’ব্রায়েন। তবে সে সময় খুব কম প্রকাশ্যে আসতেন তিনি। এমনিতে ও’ব্রায়েন ট্রাম্পের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচরদের মধ্যে একজন।
বিল হ্যাগার্টি, সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের দৌড়ে ও’ব্রায়েনের নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম বিল হ্যাগার্টি। রিপাবলিকানপন্থি এই সিনেট সদস্য ২০০৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার দায়িত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন হ্যাগার্টি। এছাড়া হ্যাগার্টির আরও একটি ইতিবাচক দিক হলো— রিপাবলিকান পার্টির সব ঘরানার নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক।
মার্কো রুবিও, সম্ভাব্য পররষ্ট্রমন্ত্রী
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ফ্লোরিডার রাজনীতিবিদ মার্কো রুবিও। তবে পরে তা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। বর্তমানে ফ্লোরিডার প্রতিনিধি হিসেবে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে রয়েছেন রুবিও। দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সিনেট কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রুবিও রয়েছেন দেশটির সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তালিকায়।
মাইক ওয়াল্টজ, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ওয়াল্টজকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে দেখা যেতে পারে। তিনি ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য। ওয়াল্টজ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে নিজেকে একজন চীনের অন্যতম প্রধান কট্টর সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
চীন-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিল প্রতিনিধি পরিষদে আনার ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা দেখা গেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে তাঁর সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।
মাইক পম্পেও, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পম্পেওকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পম্পেও সিআইএর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন ট্রাম্প। এবার জাতীয় নিরাপত্তা, গোয়েন্দা বা কূটনীতিসংশ্লিষ্ট পদেও বসাতে পারেন ট্রাম্প।
টম কটন, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী
কটন হার্ভার্ড কলেজ ও হার্ভার্ড ল স্কুলে পড়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। ট্রাম্প দাতাদের পছন্দের মানুষ আরকানসাসের এই সিনেটর। তাঁকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন ট্রাম্প।
কিথ কেলগ, সম্ভাব্য চিফ অব স্টাফ
জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো পদে আসতে পারেন কেলগ। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অন্যান্য পদের সম্ভাব্য প্রার্থী
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে টম হোমানকে বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর প্রশাসনে কাজ করেছিলেন তিনি। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দেড় বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
একই পদে বিবেচনায় আসতে পারেন চাদ ওলফ। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রায় ১৪ মাস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া এই পদে মার্ক গ্রিনকেও নিয়োগ দিতে পারেন ট্রাম্প। গ্রিন বর্তমানে প্রতিনিধি পরিষদের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক কমিটির চেয়ারমানের দায়িত্ব আছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে জন র্যাটক্লিফকে বাছাই করতে পারেন ট্রাম্প। তিনি সাবেক কংগ্রেস সদস্য ও প্রসিকিউটর। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই পদে বিবেচনায় আসতে পারেন সাবেক প্রসিকিউটর মাইক লি। তিনি উটাহ অঙ্গরাজ্যের বর্তমান সিনেটর।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ পদে সুসি উইলসকে দেখা যেতে পারে। তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমের সহব্যবস্থাপক।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ