করোনা-সংঘাতে নাজেহাল গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা
করোনা মহামারির মধ্যে হামাস ও ইসরায়েলে সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক সংঘাতে ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব, প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকা ও চিকিৎসা সামগ্রির তীব্র ঘাটতি দেখা দেওয়ায় অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে হাঁটছে সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ফিলিস্তিনের সরকারি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় বসবাসরত ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য হাসপাতাল রয়েছে ১৩ টি এবং ক্লিনিক রয়েছে ৫৪ টি। সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে এমনিতেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো।
বিজ্ঞাপন
গত নয় দিন ধরে চলা সংঘর্ষের ফলে প্রতিদিনই নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সংকট আরো গভীর হয়েছে সেখানকার চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ, যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর এ রোগে সেখানে মারা গেছেন ৯৮৬ জন।
করোনার টিকাদান কর্মসূচিও ফিলিস্তিনের ওই অংশে হয়েছে অনেকটা নামমাত্র। যেখানে ইসরায়েল নিজ দেশের ৯৩ লাখ মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশকে টিকার দুটি ডোজ দিতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে গাজা টিকার মজুত পেয়েছে মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার ডোজ, যা দিয়ে দেশটির মাত্র ৫৫ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে।
গাজার বৃহত্তম ও প্রধান হাসপাতাল আত শিফার শল্য চিকিৎসা (সার্জারি) বিভাগের প্রধান মারওয়ান আবু সাদা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ বর্তমানে দুই রণাঙ্গণে যুদ্ধ করছে। প্রথমটি হলো করোনাভাইরাস এবং দ্বিতীয়টি আরো কঠিন— সংঘাতে আহত সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাজা শাখা কার্যালয়ের প্রধান সাশা বুট্সমা বলেন,‘ গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্ট ভঙ্গুর। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি খুবই পুরনো, ভবনগুলো পুরনো, স্বাস্থ্যকর্মীরা যথেষ্ট দক্ষ নয় এবং সবসময় চিকিৎসা উপকরণ ও ওষুধের সংকট লেগেই থাকে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে।’
গত ১০ তারিখ থেকে সংঘাত শুরু হয়েছে গাজার প্রধান নিয়ন্ত্রনকারী দল হামাস ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মধ্যে। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ৯ দিন ধরে চলা এই সংঘাতে সেখানে নিহত হয়েছেন ২১২ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দেড় হাজারেরও বেশি।
করোনা রোগীদের চাপ থাকার কারণে শয্যার ঘাটতি ও স্থানাভাব দেখা দেওয়ায় গাজার অনেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের ওয়ার্ডেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ইসরায়েলি সেনা বাহিনীর গোলা আঘাতে আহত ব্যক্তিদের।
উপরন্তু মিশরের সঙ্গে সীমান্ত এলাকা বন্ধ থাকায় জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ, ওষুধ ও জ্বালানী সরবরাহ এমনিতেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল সেখানে, সংঘাতের কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
হামাসের জঙ্গি তৎপরতার কারণে ২০০৭ সালে গাজা-মিশর সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েল সরকার। তবে ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন— ওষুধ, চিকিৎসা উপকরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ওই সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল কিদরা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংগঠনগুলোর কাছ থেকে ত্রাণ সহযোগিতা চাইছি।’
তবে এত সংকটের মধ্যেও সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা সচল রেখেছেন গাজার চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা। সাশা বুট্সামা বলেন, ‘এত ঘাটতি, সংকট ও সংঘাতের মধ্যেও গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা যে পরিমাণ আন্তরিকতা দিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তা এককথায় অভূতপূর্ব।’
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ