স্পেনে বন্যায় নিহত বেড়ে ২০৫, আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা
সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যায় স্পেনের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ভ্যালেন্সিয়ায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২০৫ জন এবং সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ এখনও বহুসংখ্যক মানুষ নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভ্যালেন্সিয়ার গোডেলেটা শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন স্পেনের রাজ্য সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাঞ্জের ভিক্টর তোরেস। তিনি বলেন, “ভ্যালেন্সিয়াজুড়ে এ পর্যন্ত মোট ২০২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা করা হয়েছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছেন। তাদের সন্ধানে তৎপরতা চলছে।”
বিজ্ঞাপন
গত মঙ্গলবার আট ঘণ্টা ধরে প্রবল বর্ষণের জেরে বন্যা শুরু হয় ভ্যালেন্সিয়ায়। স্পেনের আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, সাধারণত এক বছরে স্পেনজুড়ে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তার সমপরিমাণ বর্ষণ ভ্যালেন্সিয়ায় হয়েছে মঙ্গলবার আট ঘণ্টায়।
অত্যন্ত ভারী এই বর্ষণের জেরে ভ্যালেন্সিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় বন্যা ও পাহাড়ি ঢল। ইউরোপের আবহাওয়াবিদদের মতে, নিকট ইতিহাসে ইউরোপে যত বিধ্বংসী বন্যা হয়েছে, সেসবের মধ্যে স্পেনের বন্যা অন্যতম।এর আগে ২০২১ সালে জার্মানিতে ভয়াবহ বন্যায় নিহত হয়েছিলেন ১৮৫ জন। তারও আগে ১৯৭০ সালে রোমানিয়ায় এবং ১৯৬৭ সালে পর্তুগালে বন্যার প্রাণ হারিয়েছিলেন যথাক্রমে ২০৯ এবং প্রায় ৫০০ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভ্যালেন্সিয়া রাজ্যের প্রথান শহর ভ্যালেন্সিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে সাংবাদকিদের জানিয়েছেন শহরের মেয়ার মারিয়া জোসে কাতালা।
আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, বিধ্বসী এই বন্যার জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। অন্যদিকে স্পেনের বিরোধী রাজনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করে করে বলেছেন, জনগণকে সতর্কবার্তা দেওয়া, বন্যা ও তার পরবর্তী সময়ে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করায় বিলম্ব করেছে সরকার।
স্পেনের সাধারণ জনগণেরও অনেকের মত এমন। ভ্যালেন্সিয়ার একটি সুপারমার্কেটের ম্যানেজার লরা ভিলাসকুসা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “সরকার যদি সঠিক সময়ে সতর্কবার্তা দিত, তাহলে এত প্রাণহানি ঘটত না।”
বন্যায় প্রাণহানির পাশাপাশি গুরুতর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ভ্যালেন্সিয়ায়। বন্যার পানির স্রোতে বেশ কিছু নদীর সেতু ভেসে গেছে। অনেক জায়গায় সড়ক এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির পরিবহনমন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে জানিয়েছেন ভ্যালেন্সিরয়ার প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় রাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
স্পেনের অন্যতম কৃষিজ অর্থকরী ফসল কমলালেবু। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও এই ফল রপ্তানি করে স্পেন। আর ভ্যালেন্সিয়া কমলালেবু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দেশের মোট কমলালেবুর দুই তৃতীয়াংশের উৎপাদন হয়ে ভ্যালেন্সিয়ায়।
বন্যায় ভ্যালেন্সিয়ার অধিকাংশ কমলালেবুর বাগান ধ্বংস হয়ে গেছে।
সূত্র : রয়টার্স, স্কাই টিভি
এসএমডব্লিউ