লেবাননের ভূখণ্ড থেকে রকেট হামলার পর ইসরায়েলে ক্ষতিগ্রস্ত একটি আবাসিক বাড়ির দৃশ্য। গত ১৯ অক্টোবরের ছবি

লেবাননে বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। লেবাননজুড়ে বিমান হামলার পাশাপাশি তারা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে স্থলপথেও হামলা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালাচ্ছে হিজুবল্লাহ। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের ২৫ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে লেবাননের শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

একইসঙ্গে উত্তর ইসরায়েলের এসব এলাকা তাদের হামলার বৈধ টার্গেট বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হিজুবল্লাহ। শনিবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ শনিবার সন্ধ্যায় উত্তর ইসরায়েলের ২৫টি বসতি থেকে বাসিন্দাদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার আদেশ জারি করেছে। এসব বসতির বাসিন্দাদের সতর্ক করে তারা বলেছে, এই এলাকাগুলো এখন “বৈধ সামরিক লক্ষ্যবস্তু”।

টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলের এই ২৫টি বসতির বাসিন্দাদের সরাসরি সম্বোধন করে বলেছে, “আপনাদের অবিলম্বে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। আপনাদের বসতিগুলো লেবাননে আক্রমণকারী শত্রু সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন এবং অবস্থানের জায়গা হয়ে উঠেছে। ফলস্বরূপ তারা ইসলামী প্রতিরোধের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বৈধ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”

বসতিগুলোর মধ্যে রয়েছে— কিরিয়াত শমোনা, ইয়াসোদ হামাআলা, আয়েলেট হাশাচার, হাতজোর হাগালিলিত, কারমিয়েল, মাআলোত তারশিহা, ইভেন মেনাচেম, নাহারিয়া, রোশ পিনা, শামির, শাল, মিরন, কাবরি, আবিরিম, ডাল্টন, নেফাত জিভ, কাতরিন, কাফর হানানিয়া, মানোট, বেইত হামিক, কাফর ভ্রাদিম, হারাশিম, বিরিয়া, কাফর তজভি এবং বার ইয়োহাই।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, উত্তর ইসরায়েলের যে ২৫ এলাকা খালি করার বিষয়ে হিজবুল্লাহ সতর্কতা উচ্চারণ করেছে সেগুলো লেবাননের সীমান্তের ৩ কিমি থেকে ২২ কিমি পর্যন্ত ইসরায়েলের উত্তর অংশে অবস্থিত। বিস্তৃত এই এলাকায় প্রায় ২ লাখ ইসরায়েলি নাগরিক বসবাস করেন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এটি এমন একটি কৌশল যা বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে এবং লেবাননের অন্যান্য অংশে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আর এখন হিজবুল্লাহ তাদের আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য প্রথমবারের মতো সেই একই কৌশল ব্যবহার করল।

এর আগে হিজবুল্লাহ গত শুক্রবার জানায়, তারা ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ৪৮টি অপারেশনসহ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিযান পরিচালনা করেছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী বৈরুতের পাশাপাশি লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর অপারেটিভস, অবকাঠামো এবং অস্ত্রাগারকে লক্ষ্য করে এই হামলা চলছে।

হিজবুল্লাহও পাল্টা আঘাত হানছে। গত সপ্তাহে লেবাননে অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর ৭০ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। অবশ্য ঠিক কত দিনে এই সেনারা নিহত হয়েছেন, তা এই বিবৃতিতে উল্লেখ করেনি গোষ্ঠীটি।

এর আগের সপ্তাহে এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে ৫৫ জন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার দাবি করা হয়েছিল। এছাড়া গত বছরের অক্টোবরে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

টিএম