বৈধ নথি ছাড়া বসবাসের অভিযোগে বেশ কিছু ভারতীয়কে ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চার্টার্ড বিমান ভাড়া করে গত সপ্তাহে তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। তবে ঠিক কত জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি আমেরিকা।

বলা হয়েছে, বেআইনি অভিবাসন ও মানবপাচার বন্ধ করার লক্ষ্যে ভারত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে শনিবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি চার্টার্ড ফ্লাইট ভাড়া করে দেশে অবস্থানরত অবৈধ ভারতীয় নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। ভারত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

গত শুক্রবার মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ আরও জানিয়েছে, চার্টার্ড ফ্লাইটটি গত ২২ অক্টোবর ভারতে পাঠানো হয়েছিল।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ডেপুটি সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনকারী সিনিয়র কর্মকর্তা ক্রিস্টি এ ক্যানেগালো বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনগত ভিত্তি ছাড়া অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের দ্রুত অপসারণ করা হবে এবং চোরাকারবারীদের মিথ্যাচারের শিকার হওয়া উচিত নয় অভিবাসীদের।”

ভারতীয় মংবাদমাধ্যম বলছে, গত জুন মাস থেকে আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। ভারত-সহ মোট ১৪৫টি দেশের উদ্দেশে উড্ডয়ন করা ৪৯৫টি ফ্লাইটে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মার্কিন শুল্ক বিভাগ এবং সীমান্ত প্রহরীদের নজরে ৯০ হাজার ৪১৫ জন ভারতীয় নাগরিকের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ধরা পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। তার মধ্যে ৪৩ হাজার ৭৬৪ জন কানাডার সীমান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, আর ২৫ হাজার ৬১৬ জন মেক্সিকোর সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

আর বাকি ২০ হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আমেরিকায় থাকছেন অথবা তাদের একাংশ বিমানবন্দর দিয়ে বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করেছেন বলে মনে করছে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট মার্কিন অভিবাসন আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে। ২০২৪ সালের জুনে ‘সিকিউরিং দ্য বর্ডার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশন’ ও আনুষঙ্গিক অন্তর্বর্তী চূড়ান্ত আইন কার্যকর হয়। তারপরে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ প্রায় ৫৫ শতাংশ কমেছে বলে জানানো হয়েছে।

আর এরপর থেকে আমেরিকা অনুপ্রবেশকারীদের কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, মিসর, উজবেকিস্তান, ভারত, চীন-সহ বিভিন্ন দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অভিবাসন নীতি। জো বাইডেন ও কমালা হ্যারিসের অভিবাসন নীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ অভিবাসীতে ছেয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে আসছে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবির।

এছাড়া অভিবাসীরা পোষ্য প্রাণী মেরে খেয়ে ফেলে বলে সম্প্রতি ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন। তার এই মন্তব্যে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে অনেক।

অন্যদিকে কমালা হ্যারিস এক আমেরিকান সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীতিগত ভাবে হয়তো তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেন।

আর অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, কমালা প্রেসিডেন্ট হলে অভিবাসন নীতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের থেকে অনেক কঠোর হতে পারেন।

টিএম