কানাডার নাগরিক এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন খালিস্তান মুভমেন্টের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে গত প্রায় দেড় বছর ধরে যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে ভারত ও কানাডার মধ্যে, তার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে এককভাবে দায়ী করেছেন কানাডার সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় কুমার ভার্মা।

দু-দেশের টানাপোড়েনের জেরে সম্প্রতি সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে ভারতে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি। রোববার কানাডার জনপ্রিয় টেলিভিশন সংবাদমাধ্যম সিটিভিকে রোববার একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সঞ্জয়। সেখানে তিনি বলেন, “সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অন্য একটি দেশের সঙ্গে যে কোনো কূটনৈতিক সমস্যার ক্ষেত্রে যদি আপনি সাক্ষ্য-প্রমাণের চেয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর বেশি নির্ভর করেন, তাহলে ওই দেশের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ধ্বংস হতে বাধ্য। (ভারত-কানাডা সম্পর্কের ক্ষেত্রে) ট্রুডো ঠিক তা ই করেছেন।"

ভারতীয় নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার ১৯৯৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর জেলা থেকে অভিবাসী হিসেবে কানাডায় পাড়ি জমান। পরে ২০১৫ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান তিনি। ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জার ভারতের খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস কানাডা শাখার শীর্ষ নেতা ছিলেন। ২০২৩ সালের ১৮ জুন দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের রাজধানী ভ্যানকুভারের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে নিহত হন তিনি।

সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল। ভারতের একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীও ‍ছিলেন নিজ্জার।

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রথমবার ট্রুডো অভিযুক্ত করেন ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন কানাডার পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলেন বলেন, এ অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ তার কাছে রয়েছে।

মূলত তার পর থেকে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে দু’দেশের মধ্যে, যার মিমাংসা এখনও হয়নি। এই দ্বন্দ্বের জেরে উভয় দেশই সম্প্রতি পরস্পরের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে। অতি সম্প্রতি ভারত এবং কানাডা পরস্পরের রাষ্ট্রদূতসহ ৬ জন জেষ্ঠ্য কূটনীতিককে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে। সঞ্জয় কুমার ভার্মাও রয়েছেন এই আদেশপ্রাপ্তদের তালিকায়। তবে কানাডার সরকার আদেশ দেওয়ার আগেই নয়াদিল্লি তাকে তলব করেছে।

ভারতের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের বহিষ্কারের কারণ প্রসঙ্গে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি গত ১৫ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন, নিজ্জার হত্যাকাণ্ড তদন্তের স্বার্থে কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং দূতাবাস বা হাইকমিশনের শীর্ষ কূটনীতিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কূটনীতিকদের দায়মুক্তি সংক্রান্ত বৈশ্বিক আইন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিশেষ ইস্যুতে আইনটি শিথিল করার অনুরোধ করেছিল অটোয়া, কিন্তু সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি। তাই কানাডার সরকার বাধ্য হয়ে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সিটিভিকে এ প্রসঙ্গে সঞ্জয় কুমার ভার্মা বলেন, “আমি একজন রাষ্ট্রদূত। আপনি যদি আমাকে অভিযুক্ত বা আসামি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে এর পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে হবে এবং আমাকে কিংবা আমার দূতাবাস বা সরকারকে তা দেখাতে হবে। এসব প্রক্রিয়া না মেনে তো এমনি এমনি আপনি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না।”

“আমি যদ্দুর জানি, এখনও তারা ভারতের সরকারের কাছে এ অভিযোগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করেনি।”

সূত্র : এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ