ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রধান নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার গাজার রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান তিনি। তবে দখলদার সেনারা জানত না তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, হামাস প্রধান ইসরায়েলিদের হামলায় নিহত হয়েছেন। এছাড়া দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ তার মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানিয়েছে,  গতকাল গাজার রাফার একটি ভবনে হামাসের কয়েকজন যোদ্ধাকে প্রবেশ করতে দেখে ইসরায়েলি সেনারা। এরপর সেখানে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলার পর সেনারা সেখানে যাওয়ার পর সিনওয়ারের মতো দেখতে এক যোদ্ধাসহ মোট তিনজনের মরদেহ পায় তারা। এরপর আজ নিশ্চিত হওয়া গেছে ওই মরদেহটি সিনওয়ারেরই ছিল।

সংবাদমাধ্যমটি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে পুলিশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সিনওয়ারের দাঁতের সঙ্গে মরদেহটির দাঁতের পুরোপুরি মিল রয়েছে।

 সিনওয়ারের মরদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট

হামাসের দুটি সূত্র সৌদির সংবাদমাধ্যম আশরাক আল-আসওয়াতকে সিনওয়ারের মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, গাজার ভেতর এবং বাইরে থাকা নেতাদের সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।

তারা আরও জানিয়েছেন, সিনওয়ারের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কয়েকদিন আগে সবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সিনওয়ারের মরদেহের তিনটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যাচ্ছে তিনি একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছেন। তার মাথায় গভীর ক্ষত রয়েছে। ওই সময় সিনওয়ার নিরাপত্তা ভেস্ট এবং হাতে একটি ঘড়ি পরা ছিলেন।

রাফার এই বাড়িতেই প্রবেশ করেছিলেন সিনওয়ার। বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ থেকে তার মরদেহ বের করে নিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ছবিগুলো যাচাই বাছাই করে বলেছে, মরদেহটির চোখের ব্রু, চোখের নিচের একটি দাগ এবং দাঁতের সঙ্গে সিনওয়ারের আগের ছবির সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। যার অর্থ এটি সিনওয়ারেরই মরদেহ ছিল।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে সিনওয়ারের মৃত্যুর তথ্য ঘোষণা করবেন।

কে এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার?

ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শরণার্থী ক্যাম্পে জন্ম গ্রহণ করেন।

তার পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল মাজদাল আসকালানে। পরবর্তীতে দখলদার ইসরায়েল যার নাম দেয় আসকেলন। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের ভোটাভুটির মাধ্যমে ইসরায়েলের সৃষ্টি হওয়ার পর সিনওয়ারের পরিবারকে মাজদাল আসকালান ছেড়ে গাজার খান ইউনিসে চলে যেতে হয়। সেখানে শরণার্থী হিসেবে জীবন শুরু করেন তারা।

সিনওয়ার তার জীবনের ২২ বছর দখলদার ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন। ১৯৮৮ সালে দুই ইসরায়েলি সেনাকে জিম্মি এবং তাদের হত্যা করায় সিনওয়াকে আটক করা হয়েছিল। ২০১১ সালে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান তিনি।

ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে সিনওয়ারের মরদেহ।

সিনওয়ার যখন কারাগারে ছিলেন তখন ইসরায়েলি সরকার তাকে পর্যবেক্ষণ করে বলেছিল, তিনি ‘দয়ামায়াহীন’ এবং ‘শক্তিশালী’।

ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি থাকার সময় হিব্রু ভাষা আয়ত্ত করেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার।

২০১৭ সালে হামাসের গাজা শাখার প্রধান হন তিনি। এরপর চলতি বছরের জুলাইয়ে ইসমাইল হানিয়া যখন গুপ্তহত্যার শিকার হন তখন তিনি হামাসের প্রধান নেতার দায়িত্ব পান।

দখলদার ইসরায়েলে গত বছরের ৭ অক্টোবর যে হামলা চালানো হয় সেটির ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে অভিহিত করা হয় সিনওয়ারকে।

এমটিআই