পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার সাবেক স্ত্রী ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক জেমিমা খান গোল্ডস্মিথ। এই দম্পতির সন্তানদের সঙ্গে ইমরান খানকে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দু’টি বার্তা পোস্ট করেন তিনি। প্রথম বার্তায় তিনি বলেন, “আমি সাধারণত পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করি না। তাছাড়া অনেক রাজনৈতিক ইস্যুতে আইকে’র (ইমরান খান) সঙ্গে আমার মতবিরোধও রয়েছে। কিন্তু আমার এখনকার এই বার্তা রাজনীতি নিয়ে নয়, বরং আমার সন্তানদের বাবা, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে।”

দ্বিতীয় বার্তায় তিনি বলেন, “আমি এবং আমাদের দুই সন্তান সুলাইমান এবং কাসিম খান— আমরা জানতে পেরেছে যে গত কয়েক সপ্তাহে ইমরান খানের স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার ইমরান খানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং এমনকি আদালতের আদেশ অমান্য করে তার সঙ্গে তার ছেলেদের ফোনে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছে। সুলাইমান এবং কাসিমের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়েছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর।”

“তাছাড়া আমরা জানতে পেরেছি, কারাগারের যে কক্ষে ইমরান খান রয়েছেন— সেই কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। কারাগারে তার রান্নার দায়িত্বে যে বাবুর্চি ছিল, তাকেও ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন, অন্ধকার একটি ঘরে রাখা হয়েছে তাকে। তার আইনজীবীরাও তার সার্বিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।”

পার্লামেন্টের বিরোধী দলের সদস্যদের অনাস্থা ভোটে ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রায় দেড়শ মামলা করা হয়েছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে। এসব মামলার অধিকাংশই দুর্নীতি মামলা। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের আদিয়ালা কারাগারে আছেন ইমরান।

গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর ইসলামাবাদে ইউরো-এশীয় আঞ্চলিক জোট সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন ছিল। সম্মেলনের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ইমরান খানের সঙ্গে তার বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি, পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীদের সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা দেয় পাঞ্জাবের রাজ্য সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা আদেশে বলা হয়, ৮ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।

প্রসঙ্গত, জেমিমা গোল্ডস্মিথ ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী। যুক্তরাজ্যের নাগরিক জেমিমার সঙ্গে ইমরান খান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৯৫ সালে, ২০০৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। সুলাইমান ইসা ও কাসিম নামে এই দম্পতির দুই ছেলে রয়েছে।

জেমিমার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির কয়েক মাস পর বিবিসির সাংবাদিক রেহাম খানকে বিয়ে করেন ইমরান খান, কিন্তু ২০১৫ সালেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর ২০১৮ সালে বুশরা বিবি নামের এক নারীকে বিয়ে করেন ইমরান।

অন্যদিকে বিচ্ছেদের পর জেমিমা গোল্ডস্মিথ পাকিস্তান থেকে নিজের দেশ ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে পেশাদার লেখালেখি, চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণে মন দেন। ইমরান-জেমিমা দম্পতির দুই সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গেই আছেন।

সূত্র : স্কাই নিউজ

এসএমডব্লিউ