ফাইল ছবি

সপ্তাহ দুয়েক আগে চিরশত্রু ইসরায়েলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে বড় ধরনের হামলা চালায় ইরান। এরপর ইসরায়েলের দিক থেকে ইরানে পাল্টা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিশোধের এই হামলায় ইসরায়েল ইরানি পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা করবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। তবে পরমাণু স্থাপনা নয়, ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েল হামলা করবে করবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ইতোমধ্যেই আশ্বস্ত করেছেন তিনি। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের সামরিক অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছেন। ইরানের পারমাণবিক ও তেল স্থাপনায় হামলার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে দেওয়ার পর নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে এই নিশ্চয়তা সামনে এলো।

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে ফোনকলে কথা বলার সময় ইরানের সামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তাসহ দুজন অজ্ঞাত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

দুই সপ্তাহ আগে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইতোমধ্যেই দিয়েছে ইসরায়েল। তেহরান বলেছে, গত জুলাইয়ে তেহরানে হামাসের সাবেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এবং গত মাসে বৈরুতে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরায়েলে এই হামলা চালানো হয়েছে।

চলতি বছরের ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর তেল আবিব এবং তেহরানের মধ্যে গুলি বিনিময় বেড়েছে। ইরান সেই হামলার জবাবে ইসরায়েলে শতাধিক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। প্রায় সবই ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আঞ্চলিক মিত্রদের মাধ্যমে আটকানো সম্ভব হয়েছিল।

একজন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে - যার জাতীয়তা প্রকাশ করা হয়নি - বলেছেন, ইরানে হামলা এমনভাবে করা হবে যা আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্মত হয়েছেন। কারণ তেল স্থাপনার ওপর আক্রমণ তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।

এর ফলে তেল কিনতে বেশি অর্থ খরচ করতে হতে পারে মার্কিনিদের। আর এতে করে মার্কিন ভোটাররা অসন্তুষ্ট হতে পারেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস ভোটের মাঠে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

ওই কর্মকর্তার মতে, আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ইসরায়েল দুর্বল এমন ধারণা এড়াতে ইরানে ইসরায়েলের পাল্টা আঘাত এর আগেই হবে। 

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে আলোচনার সময় তুলনামূলক “অধিক সংযত জায়গায়” ছিলেন নেতানিয়াহু। আর এটিই ইসরায়েলে থাড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সেটি পরিচালনার জন্য ১০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়ে বাইডেনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন রোববার থাড মোতায়েনের কথা ঘোষণা করে বলেছে, এটি ইসরায়েলের সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। একইসঙ্গে এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি ওয়াশিংটনের ‘লোহার আবরণের মতো’ দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বলেছেন, “ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাকে সহায়তা করতে এবং ইরান ও ইরান-সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়াদের আক্রমণ থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করার জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন সামরিক বাহিনী যে বিস্তৃত কর্মকাণ্ড সমন্বয় করেছে, এটি তারই একটি অংশ।”

প্রসঙ্গত, গত চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলে বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এর জবাবে ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। ইরানে পাল্টা হামলার পক্ষে থাকলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রকাশ্যেই ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার বিরোধিতা করেছেন।

একইসঙ্গে ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আর এরপরই ইরানের সামরিক অবকাঠামোগুলোতে ইসরায়েল আক্রমণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করলেন।

টিএম