ইসরায়েলকে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সমরাস্ত্র টার্মিনাল হাই অল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স সিস্টেম (থাড) দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অস্ত্রভাণ্ডারে অত্যন্ত কার্যকর এবং বিশেষ যেসব সমরাস্ত্র রয়েছে, সেসবের মধ্যে থাড অন্যতম।

থাডের সার্বিক পরিচালনার জন্য শতাধিক মার্কিন সেনাও পাঠানো হচ্ছে সেখানে। রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগন।

এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার সহায়তা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে এই থাড। তিনি আরও বলেছেন, গত ০১ অক্টোবর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।

গত ১ অক্টোবর রাতজুড়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮০টিরও বেশি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান। পরে ৩ অক্টোবর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ইসরায়েল যদি গাজা এবং লেবাননে সামরিক অভিযান বন্ধ না করে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ফের এ ধরনের হামলা হতে পারে।

পেশেকিয়ানের এই হুঁশিয়ারিরর পর কার্যত বিশ্বজুড়ে ইরান-ইসরায়েল সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ আশঙ্কার মধ্যেই ইসরায়েলকে থাড প্রদানের ঘোষণা দিলো পেন্টাগন।  

পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) আগ বাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইরানে হামলা চালাতে নিষেধ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা এবং আইডিএফের কর্মকর্তারাও তাতে সায় দিয়েছেন।

“মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা ইসরায়েলের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে আমাদের সামরিক ঘাঁটিতে থাকা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য— উভয়ের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ইরানের মদতপুষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী ইসরায়েলের পাশাপাশি আমাদের সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে। তাই সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলে থাড পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে”, রয়টার্সকে বলেন মেজর জেনারেল রাইডার।

থাড বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও দুর্ধর্ষ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সমরাস্ত্র। এই সমরাস্ত্রটি বহন করতে ৬টি ট্রাকের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিটি ট্রাকে ৬টি লাঞ্চার এবং প্রতিটি লাঞ্চারে ৮টি ইন্টারসেপ্টর থাকে। থাডের রাডারও খুব শক্তিশালী। এটি পরিচালনা করতেই প্রয়োজন পড়ে প্রায় ১০০ সেনার।

এর আগেও যুদ্ধকালীন সহযোগিতা হিসেবে ইসরায়েলে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সেসব কখনও ইসরায়েলের সীমানার মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেনি। ইসরায়েলি বাহিনীকে সহযোগিতা শেষে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে ফিরে গেছে সেগুলো।  

সেই হিসেবে এই প্রথম ইসরায়েলে নিজেদের সমরাস্ত্র ও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একে ইসরায়েলে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে অনেক সামরিক বিশ্লেষক।

এদিকে ইসরায়েলে থাড ও সেনা সদস্য পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের সেনাসদস্যদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আমরা আবারও বলছি যে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছে আমাদের নেই, কিন্তু আমাদের জনগণ ও জাতীয় স্বার্থে যদি আঘাত আসে— সেক্ষেত্রে আমরা যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে পিছপা হবো না।”

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ