যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস নিজের মেডিকেল রেকর্ডস বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা ‘দুর্দান্ত’ এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি সক্ষম আছেন।

এ তথ্য প্রকাশ করে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিস তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ না করা এবং এ নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছেন।

একই সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস দাবি করেছেন, তার রিপাবলিকান দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ‘মার্কিন জনগণকে জানাতে চান না যে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ফিট বা সক্ষম আছেন কী-না।’

এদিকে, কোন ধরনের মেডিকেল রেকর্ডস বা স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য প্রকাশ না করে সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রচার দল ট্রাম্পের চিকিৎসককে উদ্ধৃত করে বলেছে, তিনি ‘নিখুঁত এবং চমৎকার শারীরিক অবস্থায়’ রয়েছেন।

ট্রাম্পের প্রচার দল বলেছে, রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থীর ‘অত্যন্ত ব্যস্ত এবং সক্রিয় প্রচার-প্রচারণা কর্মসূচি’ চলছে এবং তাদের দাবি ‘কমালা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো দম বা স্ট্যামিনা নেই’।

মূলত হোয়াইট হাউস কমালা হ্যারিসের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর উভয় পক্ষ পরস্পরকে কথার বাক্যবাণে জর্জরিত করছে। হোয়াইট হাউসের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম’।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কর্নেল ডা. জসুয়া সিমন্স, যিনি গত তিন বছর ধরে কমালা হ্যারিসের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন, তিনি লিখেছেন এপ্রিল মাসে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ছিল ‘অসাধারণ’ এবং একই সাথে যোগ করেন, তিনি স্বাস্থ্যসম্মত ও সক্রিয় জীবন যাপন করেন।

মেডিকেল রেকর্ডস তিনি উল্লেখ করেছেন, তার (কমালা হ্যারিসের) পরিবারের কোলন ক্যান্সার ও অ্যালার্জিতে ভোগার ইতিহাস আছে। ফলে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোলন্সকপি ও বছরে একবার ম্যামোগ্রাম (ব্রেস্ট স্ক্রিনিং)-সহ প্রতিরোধমূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়মিত করে থাকেন।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এসব তথ্য প্রকাশের পর কমালা হ্যারিসের প্রচারণা দলের একজন মুখপাত্র সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, “এবার আপনার পালা, ডোনাল্ড ট্রাম্প”। নর্থ ক্যারোলাইনায় প্রচার কর্মসূচির আগে কমালা হ্যারিস তার প্রতিদ্বন্দ্বীর মানসিক অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ও বলেন, কীভাবে তিনি ‘খেই হারিয়ে ফেলেন’।

ডেমোক্র্যাটরা ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে বারবার তাকে আক্রমণ করছেন। কয়েক মাস আগে রিপাবলিকানরা সরাসরি একই ধরনের সমালোচনা করতেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিষয়ে।

নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে ট্রাম্প হবেন তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। তবে, অবশ্যই তিনি জো বাইডেনের রেকর্ডের অংশীদার হবেন। তিনিও জানুয়ারিতে একই বয়সে তার বর্তমান মেয়াদ শেষ করবেন।

হ্যারিস ক্যাম্পের থেকে আসা চাপের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রচার দলের কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর স্টিভেন চিয়াং বলেছেন, পেনসিলভানিয়ার বাটলারে হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনার পর ট্রাম্প নিজেই স্বেচ্ছায় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও তাকে যারা চিকিৎসা দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করেছেন।

“এসব কিছুই প্রমাণ করেন তিনি কমান্ডার ইন চীফ হওয়ার জন্য যথার্থ ও চমৎকার স্বাস্থ্যের অধিকারী,” বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, জাতীয় জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে কমালা হ্যারিস সামান্য ব্যবধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। কিন্তু দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনের জন্য দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার উত্তরসূরি হওয়ার জন্য বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের নাম প্রস্তাব করলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বদলে যায়।

এর আগে গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থী এবং তার (জো বাইডেনের) প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ডিবেট বা বিতর্ক অনুষ্ঠানে ‘হতাশাজনক পারফরম্যান্সের’ পর প্রার্থী হিসাবে নিজেকে প্রত্যাহার করার জন্য জো বাইডেনের ওপর চাপ বাড়ছিল।

অগাস্টে ডেমোক্র্যাটদের কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করেন কমালা হ্যারিস। অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। বিবিসি বাংলা

টিএম