রতন টাটা ছিলেন ভারতের আইকন। সেই আইকনকেই হারাল দেশটি। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে জীবনাবসান হয় তার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির বহু মানুষের কাছেই এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন রতন টাটা।

১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পারসিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরাটে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরি জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য।

রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎ ভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান।

মুম্বাইয়ে ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন ক্যানন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন রতন। তারপরে সিমলায় বিশপ কটন স্কুল এবং নিউইয়র্ক সিটিতে রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৫ সালে স্নাতক পাস করেন তিনি। পরে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।

পরে সত্তরের দশকে টাটা গোষ্ঠীতে পরিচালন বিভাগে দায়িত্বলাভ করেন রতন। ১৯৯১ সালে চেয়ারম্যান হন। মূলত ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার। ২০১২ সাল পর্যন্ত পরিচালনার দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। 

পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানা গড়তে চেয়েছিলেন রতন টাটা। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চার চাকা গাড়ির স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন তিনি। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল বামপন্থিরা। তবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক টানাপড়েনে সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানা হয়নি। সেই কারখানা হয় গুজরাটের সানন্দে।

যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাটে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা।

এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হয়েছিলেন রতন টাটা।

২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’। মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন।

টিএম