লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নিহত প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহর দুই উত্তরসূরিকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে নিহত ওই দুই নেতার নাম উল্লেখ করেননি তিনি। বুধবার (৯ অক্টোবর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নিহত নেতার দুই উত্তরাধিকারী নিহত হয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার জানিয়েছেন। ইসরায়েল ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্থল আক্রমণ বাড়িয়েছে এবং দক্ষিণ লেবাননে চতুর্থ সেনা ডিভিশন মোতায়েন করেছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যাকাণ্ডের পর হিজবুল্লাহর ডেপুটি লিডার আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির দরজা খোলা রাখার কথা ঘোষণার পর নিজের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একথা বলেন নেতানিয়াহু।

হাসান নাসরাল্লাহর দুই উত্তরসূরির নাম উল্লেখ না করে ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা হিজবুল্লাহর সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করেছি। আমরা (হাসান) নাসরাল্লাহকে এবং নাসরাল্লাহর উত্তরসূরিকে এবং তারও উত্তরসূরিসহ হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে চিরতরে সরিয়ে দিয়েছি।”

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, নাসরাল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রত্যাশিত ব্যক্তি হাশেম সাফিউদ্দীনকে সম্ভবত “নির্মূল” করা হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু “উত্তরসূরির উত্তরসূরি” (রিপ্লেসমেন্ট অব দ্য রিপ্লেসমেন্ট) বলতে কাকে বোঝাতে চেয়েছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।

অবশ্য ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছিলেন, গত সপ্তাহে যখন যুদ্ধবিমান বোমাবর্ষণ করেছিল তখন ইসরায়েল জানত সাফিউদ্দীন হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দপ্তরে ছিলেন এবং সাফিউদ্দীনের অবস্থা “পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং যখন আমরা জানব, আমরা জনসাধারণকে জানাব।”

হিজবুল্লাহর সাথে এক বছরের সীমান্ত সংঘর্ষের পর গোষ্ঠীটির ওপর ইসরায়েলি আক্রমণ ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে এবং সেই বিমান হামলার পর থেকে সাফিউদ্দীনকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এই গোষ্ঠীটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের প্রক্সি বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র অংশ এবং গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সমর্থনে কাজ করছে।

মঙ্গলবারের ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আজ অনেক, বহু বছরের পর হিজবুল্লাহ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।”

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার বলেছে, দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বিমান হামলায় ছয় সেক্টর কমান্ডার এবং আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৫০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ পরবর্তী প্রধান হিসেবে শোনা যাচ্ছিল হাশেম সাফিউদ্দিনের নাম। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহর পরবর্তী প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।

তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসিম সাফিউদ্দিনকে লক্ষ্য করে বৈরুতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল। হামলার পরপরই লেবানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছিল, হামলার পর শুক্রবার থেকে সাফিউদ্দিনের সঙ্গে সবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। তা কেউ বলতে পারছে না।

তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল সাফিউদ্দিনের হয়ত মৃত্যু হয়েছে। আর মঙ্গলবার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করল ইসরায়েল।

হাশেম সাফিউদ্দীন হাসান নাসরাল্লাহর দূরসম্পর্কের ভাই। তিনি একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বও। এছাড়া তিনি নিজেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর খুব কাছের বংশধর হিসেবেও দাবি করতেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স গত ২৮ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, হাসান নাসরাল্লাহর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক, শারীরিক গঠন একইরকম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং মহানবীর বংশধর হওয়ায় তার উপরই হিজবুল্লাহর দায়িত্ব আসতে পারে।

টিএম