ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রেশ কেটে যাওয়ার আগেই লেবাননে নতুন উদ্যমে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বুধবার সকালে ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের ২৮টি গ্রামের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইডিএফ।

আইডিএফের কর্মকর্তা এবং আরবি ভাষার মুখপাত্র কর্নেল আভিচায়ে আদরাই মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে সীমান্তবর্তী ২৮টি গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্দেশে আরবি ভাষায় তিনি লিখেছেন, “হিজবুল্লাহর কার্যক্রম আইডিএফকে এই অভিযান শুরু করতে বাধ্য করেছে। আইডিএফ আপনাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি চায় না। এ কারণে আপনাদের নিরাপত্তার জন্যই অনুরোধ করছি, যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। কেউ যদি হিজবুল্লার যোদ্ধা, তাদের স্থাপনা এবং অস্ত্রশস্ত্রের কাছাকাছি থাকতে চান, তাহলে নিজের ঝুঁকিতে থাকবেন।”

পোস্টে কর্নেল আদরাই আরও বলেছেন, অভিযানের হালনাগাদ তথ্য আইডিএফ প্রকাশ করবে এবং অভিযান শেষ হলে উপযুক্ত সময়ে ওই গ্রামবাসীদের নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে আসার আহ্বান জানাবে।

হিজবুল্লাহ বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র ইসলমি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ১৯৮৫ সালে ইরানের প্রত্যক্ষ মদতে প্রতিষ্ঠিত এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের ওপারেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এই দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেই হিজবুল্লার সদরদপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর অবস্থান। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত দশকগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে ছোটো-খাটো সংঘাত চলেছে, তবে তা বড় আকার নিয়েছে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবরের পর।

গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের অতর্কিত হামলা চালায় এবং ২৪২ জন জিম্মিকে ধরে নিয়ে যায়। সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ, জবাব দিতে শুরু করে ইসরায়েলও। তবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হিজবুল্লার বিরুদ্ধে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। দেশটির বিমান বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ গোষ্ঠীটির বেশ কয়েকজন কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এক কথায়, গত দু’সপ্তাহে হিজবুল্লাহর শীর্ষ চেইন অব কমান্ড ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েল।

তারপর গতকাল ভোর রাত থেকে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে আইডিএফ। এর প্রতিক্রিয়ায় ওই দিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তবে সেগুলোর কয়েকটি বাদে বাকিগুলোকে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই টুইটারে দক্ষিণ লেবানের ২৮ গ্রামের বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিলো আইডিএফ।

সূত্র : টাইম অব ইসরায়েল

এসএমডব্লিউ