মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ) এবং তিনটি রাজ্যের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সম্মেলন উপলক্ষে নয়াদিল্লি আসার আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রথম কোনো দেশের বিরোধীপক্ষকে এ ধরনের আমন্ত্রণ পাঠাল ভারত।

মিয়ানমারের যে তিনটি রাজ্যের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেই রাজ্যগুলোর নাম চিন, রাখাইন, এবং কাচিন। দেশটির সঙ্গে যে ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে ভারতের, সেই সীমান্তের ওপারেই এই তিন রাজ্যের অবস্থান।

আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি হবে ‘কনস্টিটিউশনালিজম অ্যান্ড ফেডারেলিজম’ নামের এই সম্মেলন। ভারতের সরকারি থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডব্লিউএ) এর আয়োজক। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর নিজে এই সংস্থার প্রধান উপদেষ্টার পদে রয়েছেন। সম্মেলনে বিরোধীদের আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেলেও মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তাকে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হবে কি না— তা এখনও নিশ্চিত নয়।

মিয়ানমারের চিন রাজ্যে সক্রিয় সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (সিএনএফ) ভাইস চেয়ারম্যান সুই খার সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে রয়টার্সকে বলেন, “আমি যতদূর জানি, এই প্রথম ভারত কোনো রাষ্ট্রের বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। এটা খুবই ভালো এবং ইতিবাচক প্রচেষ্টা। আমরা সম্মেলনে আমাদের প্রতিনিধি পাঠাব।”

সিএনএফ ছাড়াও আরও যে দু’টি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেগুলো হলো রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় আরাকান আর্মি (এএ) এবং কাচিন রাজ্যে সক্রিয় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কিআ)। সম্মেলন সংক্রান্ত বিশদ তথ্য জানতে নাগ, এএ এবং কিআ’র মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু তাদের কেউ কথা বলতে চাননি।

মিয়ানমারের জান্তা এবং ভারতের আইসিডব্লিউএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তারাও এ ইস্যুতে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচি এবং তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। তারা এখনও কারাগারে আছেন।

মিয়ানমারের এই ঘটনা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সরব থাকলেও ভারত এতদিন এ ইস্যুতে কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো কথা বলা কিংবা পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। সেই হিসেবে এই প্রথম মিয়ানমার ইস্যুতে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ