বন্যার কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিষধর সাপের প্রকোপ বাড়ছে। পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনমের ঘাটতির কারণে সাপের কামড়ে মৃত্যুঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থার হিসেবে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারা যান এক লাখ ৩৮ হাজার। মঙ্গলবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর এই বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড উইলিয়ামস বলেন, প্রতি চার থেকে ছয় মিনিটে সাপের কামড়ে একজন মানুষের মৃত্যু ঘটছে।

তিনি বলেন, সাপের কামড়ে প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধিত্ব বরণ করেন। সাপের বিষের কারণে পক্ষাঘাত, মারাত্মক রক্তক্ষরণ, কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যায় ভোগে মানুষ।

উইলিয়ামস বলেছেন, সাপের কামড়ের বেশিরভাগ ভুক্তভোগী ক্রান্তীয় ও দারিদ্র্য অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা বেশি বিপাকে পড়ছে। এসব অঞ্চলে নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা না থাকায় পরিবারগুলোর একদিকে চিকিৎসার ব্যয় বাড়ে অন্যদিকে আরও দরিদ্র্য হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সাব-সাহারা অঞ্চলে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাত্র আড়াই শতাংশ সেবা পান ভুক্তভোগীরা।

ডব্লিউএইচও’র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ১৯৮০ সাল থেকে অ্যান্টিভেনম উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ায় আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে এই সংক্রান্ত চিকিৎসার ব্যাপক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

• বেশি উপদ্রব দক্ষিণ এশিয়ায়

উইলিয়ামস বলেছেন, সাপের কামড়ের শিকার সবচেয়ে বেশি ভারতে। প্রতি বছর দেশটিতে ৫৮ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানও কঠিন পরিস্থিতিতে আছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যার কারণে সাপের কামড় ও মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে বলে জানান তিনি। জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘বিশ্বের নানা প্রান্তে, যেখানে এই ধরনের বিপর্যয়গুলো নিয়মিতভাবে ঘটছে সেখানেই এই সমস্যাটি দেখা দিচ্ছে। একই সমস্যা আমরা পাকিস্তানের সবশেষ বড় বন্যার সময়ে দেখেছি। এটা মিয়ানমারে ঘটছে, বাংলাদেশে ঘটছে।’’

প্রতিষেধকের ঘাটতি নিয়ে তিনি বলেন, প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিছু অঞ্চলে পর্যাপ্ত নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা নেই। পরিস্থিতি উন্নয়নে ডব্লিউএইচও বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জায়গা পরিবর্তনের পাশাপাশি বিষধর সাপের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। এ কারণে আগে সমস্যাটি ছিল না এমন জায়গাতেও সাপের কামড়ের ঝুঁকি বাড়ছে।

এসএস