ট্রেড ইউনিয়নকে স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং কর্মস্থলের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন খাতের আন্তর্জাতিক জায়ান্ট স্যামসাংয়ের ভারতীয় শাখা স্যামসাং ইন্ডিয়ার কর্মীরা। গত ১১ দিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং ইন্টারন্যাশনাল ভারতে প্রথম কারখানা স্থাপন করে ১৯৯৬ সালে, দিল্লির নয়ডা এলাকা। পরে ২০০৭ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুম্বুদুরে আরেকটি কারখানা স্থাপন করে কোম্পানি। দুই কোম্পানিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২ হাজারের কিছু বেশি সংখ্যক কর্মী। তাদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন কর্মী আন্দোলনে নেমেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

স্যামসাং ইন্ডিয়ার দু’টি কারখানার মধ্যে তামিলনাড়ুর কারখানাটি বড়। আন্দোলনও হচ্ছে মূলত এই কারখানাতেই। কারখানার সংলগ্ন একটি জমিতে তারা তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি গত ১১ দিন ধরে জারি রেখেছেন। নয়ডা কারখানার কর্মীরাও কর্মবিরতিতে আছেন বলে জানা গেছে।

কোম্পানির ভারতীয় শাখা কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি নেই। তবে কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে কয়েকটি সংস্থা গঠন করেছেন। সেগুলোর মধ্যে বৃহত্তমটি হলো স্যামসাং লেবার ওয়েলফেয়ার ইউনিয়ন (সিলউ)। আন্দোলনে নেতৃত্বেও রয়েছে সিলউ।

ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর জাতীয় পর্যায়ের ঐক্যমঞ্চ সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (সিটু)এই সংস্থাটিকে বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে সহযোগিতা-সমর্থন দিয়ে আসছে। সিটু ভারতের কমিউনিস্ট দল কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্কসিস্টের (সিপিএম) অন্তর্ভুক্ত।

স্যামসাং ইন্ডিয়ার কর্মীদের দাবিগুলো হলো— সিলউকে স্যামসাং ইন্ডিয়ার ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, বেতন-ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং, কর্মী এবং কোম্পানির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের দর কষাকষির সুযোগ এবং কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন।

বর্তমানে স্যামসাং ইন্ডিয়ার কর্মীদের গড় বেতন ২৫ হাজার রুপি।

সিটু তামিলনাড়ু শাখার নেতা এ সুন্দরারাজন স্যামসাং কর্মীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, “কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যতদিন তাদের দাবি পূরণ না হবে, ততদিন আন্দোলন জারি থাকবে।”

এদিকে দাবি আদায়ের পক্ষে গতকাল বুধবার সকালে আন্দোলনরত কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পাশপাশি ১০৪ জনকে আটকও করে পুলিশ। তবে সন্ধ্যার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, স্যামসাং কোম্পানির ইতিহাসে কখনও কর্মীদের এত দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বুধবার আটক কর্মীদের মুক্তির পর কোম্পানির সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা আমাদের স্যামসাং ইন্ডিয়ার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল এবং আমাদের মধ্যকার পার্থক্যগুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করছি।”

তামিল নাড়ু রাজ্য সরকারের শ্রমকল্যাণ মন্ত্রী সিভি গণেশন বিবিসিকে বলেন, “আমরা স্যামসাং ইন্ডিয়ার কর্তৃপক্ষ এবং কর্মী— উভয়য়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে।”

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ