বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং তার জেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৃষ্টিপাত ও বন্যার হার বেড়ে যাওয়ার ফলে বাড়ছে সাপের ছোবলে মৃত্যুর ঝুঁকিও। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একদিকে বিষাক্ত সাপের বংশবিস্তার বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে সাপের কামড়ের শিকার রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধেরও ব্যাপক ঘাটতি চলছে বিশ্বজুড়ে।

জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্পদংশন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড উইলিয়ামস মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এসব তথ্য।

তিনি বলেন, “প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ বিষাক্ত সাপের ছোবলের শিকার হয়। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যু ঘটে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের। এছাড়া আরও প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কোনো না কোনো স্থায়ী শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।”

প্রসঙ্গত, সাপের ছোবলের শিকার হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে অনেক রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায়। অনেক সময় এই অবস্থায় ফুসফুস কিংবা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে তার। কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়া কিংবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণেও মৃত্যু ঘটে অনেক রোগীর।

বিশ্বজুড়ে সর্পদংশনের অধিকাংশ ঘটনা ঘটে উষ্ণ বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে। প্রধানত শিশুরাই সাপের ছোবলের প্রধান শিকার হয়। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৫৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে বিষাক্ত সাপের কামড়ে। দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ-পাকিস্তানেও সাপের কামড়ে প্রতি বছর মারা যায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ।

এছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও সাপের কামড়ে মারা যায় প্রচুর মানুষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদানসহ বেশ কয়েকটি দেশে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার বাড়ছে।

আর এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে ওষুধের ঘাটতি। উইলিয়ামস বলেন, “গত শতকের আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি সাপের কামড়ের ওষুধ তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে অল্প কিছু কোম্পানি এই ওষুধ তৈরি করছে, কিন্তু চাহিদার তুলনায় তার পরিমাণ বেশ কম।”

“সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চল। প্রতি বছর এই অঞ্চলে যত মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হন, তাদের মধ্যে গড়ে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ যথযাথ চিকিৎসাসেবা পান। ওষুধের উচ্চমূল্য এবং দুষ্প্রাপ্যতা এ জন্য দায়ী,” এএফপিকে বলেন ডেভিড উইলিয়ামস।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ