জামিন পাওয়ার পর রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের দিল্লি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

কেজরিওয়াল বলেন, তিনি সাবেক উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার সঙ্গেও কথা বলেছেন। সিসোদিয়া জানিয়েছেন, তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হতে চান না। জনতা তাকে জিতিয়ে না আনলে তিনি আর উপ মুখ্যমন্ত্রীও হতে চান না।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি আমার বিরুদ্ধে চুরি, দুর্নীতি, ভারত মাতাকে ঠকানোর মতো অভিযোগ করেছে। ভগবান রাম যখন বনবাস থেকে ফিরে এলেন, তখন সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল। আমিও অগ্নিপরীক্ষা দিতে তৈরি। কেন্দ্রীয় সরকার অনেকগুলো আইন করে আমার সব ক্ষমতা হরণ করে নিয়েছে। একমাত্র যে জিনিসটা আমি সারা জীবন ধরে অর্জন করেছি, তা হলো সততা।

কেজরিওয়াল বলেন, কিছু মানুষ বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট আমাদের ওপর যে বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়েছে, তাতে আমি কাজ করতে পারব না। যদিও সরকার আগেই এমন সব বিধিনিষেধ চাপিয়েছে, যাতে আমরা কাজ করতে না পারি।

তার বক্তব্য, ‘যদি আপনারা মনে করেন, আমি সৎ, তাহলে বিপুল সংখ্যায় আমায় ভোট দেবেন। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসব।’

দ্রুত ভোট চান কেজরিওয়াল

কেজরিওয়াল বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে ভোট হওয়ার কথা। আমি চাই, নির্বাচন এগিয়ে আনা হোক। নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন। তখন দিল্লির বিধানসভা ভোট হোক।

কেজরিওয়াল জানান, যতদিন নির্বাচন না হচ্ছে, ততদিন অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। আম আদমি পার্টির (আপ) বিধায়করা দুই-তিন দিনের মধ্যে বৈঠকে বসে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঠিক করবেন।

কে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আপ নেতা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘দুইটি নাম নিয়ে দলের অন্দরে খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে। দুজনেই বর্তমানে মন্ত্রী। অতিশি এবং সৌরভ ভরদ্বাজ। এর মধ্যে অতিশির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে আমার মনে হয়। তবে কেজরিওয়াল অন্য কাউকেও বেছে নিতে পারেন।’

কেজরিওয়াল বলেছেন, তিনি জেল থেকে এলজি-কে চিঠি লিখতে চেয়েছিলেন। তার জায়গায় স্বাধীনতা দিবসে অতিশিকে তার হয়ে পতাকা তোলার অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, আর চিঠি লিখলে তাকে এরপর পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হবে না।

কেজরিওয়াল বলেন, ব্রিটিশরাও কখনো ভাবেনি, তারা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের থেকে বড় কোনো ডিক্টেক্টর ভারত শাসন করবে।

কেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন কেজরিওয়াল?

আপ নেতার ব্যাখ্যা, ‘কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তার রেখাচিত্র নিচের দিকে গেছে। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি থেকে একজন আপ প্রার্থীও জেতেননি। তখনই প্রচারের সময় আমরা বিষয়টা টের পাই।’

তিনি বলেন, মানুষ কেজরিওয়ালের জেলে বসে মুখ্যমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে থাকাটাও পছন্দ করেনি। এখন ইস্তফার পর তার প্রতি মানুষের একটা সহানুভূতি দেখা দেবে বলে তারা মনে করছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

উদ্ধব ঠাকরের ছেলে ও শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, ‘কেজরিওয়ালের কোনো ভয়ডর নেই। তিনি দেশ ও সংবিধান বাঁচাতে লড়াই করছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তো বিজেপি অফিস থেকে চালানো হয়।’

আন্না হাজারে বলেছেন, ‘আমি প্রথম থেকে কেজরিওয়ালকে বলে আসছি, রাজনীতিতে যোগ না দিতে। আমরা একসঙ্গে বহু বছর কাজ করেছি। সেইভাবেই কাজ করে যেতে বলেছিলাম। ও আমার কথা শোনেনি। এখন যা হওয়ার হয়েছে।’

সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বলেছেন, ‘কেজরিওয়াল দুইটি কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো বিরোধীদের টার্গেট করেছে। সিপিআই এবং ইন্ডিয়া-ব্লকের দলগুলিও তাই মনে করে। দ্বিতীয়ত, তিনি পদত্যাগ করতে চান। আমরা মনে করি, তিনি মানুষের ভোটে আবার জিতে আসবেন।’

বিজেপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘কেজরিওয়াল আগে কেন ইস্তফা দিলেন না? লালুপ্রসাদ দিয়েছিলেন, হেমন্ত সোরেন দিয়েছিলেন, কিন্তু কেজরিওয়াল দেননি। তার কি মনে হয়েছে যে একবার চেয়ার ছাড়লে আর তা ফিরে পাবেন না?’

সূত্র: ডিডাব্লিউ বাংলা

এসএসএইচ