যেভাবে রাডারের বাইরে রাখা হয় শেখ হাসিনার বিমান
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতের দিল্লিতে যান তিনি। তাকে ভারতে পৌঁছে দেয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান।
শেখ হাসিনা পালানোর এক মাস পর জানা গেল অবস্থান ও যাত্রাপথ গোপন রাখার স্বার্থে তাকে বহনকারী ফ্লাইট ‘এজেএক্স ১৪৩১’ বিমানটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রাখা হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার জানিয়েছে, হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি প্রথমে কলকাতার দিকে যায়। এরপর গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটির দিকে যাত্রা করে।
বিমানটি প্রথমে কলকাতার দিকে যায়, কারণ এটি দ্রুত বাংলাদেশের আকাশসীমা ছাড়তে চেয়েছিল। ঢাকা-দিল্লির যে আকাশপথ রয়েছে সেটি দিয়ে গেলে বিমানটিকে রাজশাহীর উপর দিয়ে যেতে হতো। এতে করে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় বিমানটিকে আরও কয়েক মিনিট থাকতে হতো।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে যাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিট আগে বিমানটি একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে। ওই সময়ই এটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে বিমানের অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি ও সয়ংক্রিয় জিওলোকেটরের তথ্য পাওয়া যায়। বিমানটি যখন পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন এটির ট্রান্সপন্ডারটি চালু করা হয়।
আরও পড়ুন
অপরদিকে বিমানটির জিওলোকেটর চালু করা হয় ঢাকা-কলকাতা রুটের ‘বিইএমএকে’ ওয়ে পয়েন্টে পৌঁছানোর পর। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিমানটির কোড নাম্বার দেয় ১৪৩১। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে প্রতিটি বিমানকে চার সংখ্যার এমন আলাদা একটি কোড দেওয়া হয়। এই কোডটি হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ট্রান্সপন্ডারে ম্যানুয়ালি যুক্ত করেন ক্রুরা।
যদিও বিমানটি সেকেন্ডারি রাডারে দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু পাইলটরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কলকাতা অঞ্চলের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, বিমানটিকে ২৪ হাজার ফুট উচ্চতায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। উড্ডয়নের পর শাহজালাল বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোলার হাসিনাকে বহনকারী বিমানের পাইলটকে একটি সতর্কতা বার্তাও পাঠান। এতে বলা হয়, ‘একটি বিমান ঢাকার দিকে আসছে এবং এটি তাদের ঠিক উপরে আছে। বিমানটি ২৬ হাজার ফুট নিচে নেমে আসছে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের তথ্য অনুযায়ী, হাসিনার বিমানটি বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করার পরই এটিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা ঘাঁটিতে থাকা দুটি ড্যাসাল্ট রাফায়েল যুদ্ধবিমান এসকর্ট দেয়।
ইন্ডিয়া টুডে আরও জানায়, হাসিনার বিমান ভারত সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় এটিকে অনুসরণ করা শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন
সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সাথে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য ইমিগ্রেশন করেননি। হাসিনার কাছে ওই সময় কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং রেহানার কাছে ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি হিন্দন ঘাঁটিতে অবতরণ করে। যা রাজধানী দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানটি হিন্দন ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর হাসিনাকে উত্তর প্রদেশের একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমটিআই