বেতন ও বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে গিয়েছেন উড়োজাহাজ প্রস্তুত খাতের বৃহত্তম বৈশ্বিক কোম্পানি বোয়িংয়ের সিয়াটল-পোর্টল্যান্ড শাখার কর্মীরা। বোয়িংয়ের কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব মেশিনিস্ট অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ওয়ার্কাসের (আইএএম) ডাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে এই ধর্মঘট।

বোয়িং সিয়াটল-পোর্টল্যান্ড শাখার মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। বোয়িংয়ের ম্যাক্স সিরিজের উড়োজাহাজগুলো প্রস্তুত করা হয়েছিল এই শাখাতেই।

সম্প্রতি সিয়াটল-পোর্টল্যান্ড শাখার কর্মীরা মাসিক বেতন ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ন্যূনতম বোনাস ৩ হাজার ডলার করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা মানতে গড়িমসি করায় গত সপ্তাহে ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল আইএএম সিয়াটল শাখা।

ধর্মঘটের ঘোষণার আগে এ ইস্যুতে ভোট আহ্বান করা হয়েছিল। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ কর্মীই ধর্মঘটের পক্ষে ভোট । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইএএম সিয়াটল শাখার প্রেসিডেন্ট জন হোল্ডেন ভোটের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে এক ঘোষণায় বলেন, “ইউনিয়নের সব সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলছি, আজ সন্ধ্যা থেকে আমাদের ধর্মঘট শুরু হলো। নিজেদের এবং নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে আমরা এই কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হলাম।”

যে মিলনায়তনে দাঁড়িয়ে হোল্ডেন কথা বলছিলেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বোয়িংয়ের হাজার হাজার কর্মী। হোল্ডেন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়ার পর সবাই সমস্বরে স্লোগান দিয়ে ওঠেন, “ধর্মঘট! ধর্মঘট! ধর্মঘট!”

নিজ বক্তব্যে জন হোল্ডেন বলেন, “কর্মীদের অনেকেই তাদের বেতন ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন। আমরা যখন কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে ২৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবি জানালাম, সে সময় অনেকেই আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। অনেক বুঝিয়ে তাদের শান্ত করতে হয়েছে।”

“কিন্তু আমাদের এই দাবি মানতেও কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে। যতদিন পর্যন্ত কোম্পানি আমাদের দাবি মেনে না নিচ্ছে, ততদিন আমাদের ধর্মঘট চলবে।”

পরে বক্তব্য শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে হোল্ডেন বলেন, “আমাদের আলোচনার দরজা খোলা আছে। কর্তৃপক্ষ যদি কর্মীদের বেতন-বোনাস সংক্রান্ত নতুন কোনো চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে চায়, তাহলে ধর্মঘট স্থগিত রেখে আমরা আলোচনার টেবিলে যেতে প্রস্তুত আছি।”

এদিকে, ধর্মঘট ঘোষণা করার এক ঘণ্টা পর সিয়াটল-পোর্টল্যান্ড শাখার কর্মীদের উদেশে একটি চিঠি দেন বোয়িংয়ের শীর্ষ নির্বাহী কেলি অর্টবার্গ। সেই চিঠিতে তিনি বলেন, বোয়িংয়ের ম্যাক্স সিরিজের ৭৭৭ এবং ৭৫৭ বিমানগুলোতে যান্ত্রিক ত্রুটি শনাক্ত হওয়ায় গ্রাহকদের অনেকেই কোম্পানির ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন। ফলে সম্প্রতি সময়ে বেশ চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কোম্পানি।

“সম্প্রতি কোম্পানির পেশাগত সুনামের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। সবাইকে সম্মিলিতভাবেই এ চেষ্টা করতে হবে এবং এই মুহূর্তে তাতে কোনো বাধা এলে কোম্পানির পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে যাবে। কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে আমি সিয়াটল-পোর্টল্যান্ড শাখার কর্মীদের ধর্মঘট থেকে সরে আসার অনুরোধ করছি,” চিঠিতে বলেছেন কেলি অর্টবার্গ।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ