ফাইল ছবি

মিয়ানমারের একশোর বেশি নারী ও শিশুসহ রোহিঙ্গা মুসলমানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক শিবিরে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখার প্রতিবাদে তারা অনশন করছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন দমনপীড়নের পর ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আসেন। তাদের ঘরে ফেরার আশা খুব কম। মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব ও প্রাথমিক অধিকার ব্যাপকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।

ভারতের আসামের মাটিয়া ট্রান্সিট শিবিরে অনশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক রোহিঙ্গা বলেন, অনশনে শামিল হয়েছেন প্রায় ১০৩ জন রোহিঙ্গা মুসলিম, ৩০ জন খ্রিস্টান চীন শরণার্থী (এরাও মিয়ানমারের বাসিন্দা)। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া শরণার্থী শংসাপত্রও রয়েছে অনেকের।

ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা নথিবিহীন অভিবাসন-প্রত্যাশীদের জন্য দেশটির সবচেয়ে বড় ডিটেনশন কেন্দ্র এটি।

ওই ব্যক্তি বলেন, অনেকের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরও তারা ডিটেনশন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন। তারা অপরাধী নন, তারা নির্যাতন এড়াতে পালিয়ে এসেছিলেন। ৩৬ জন রোহিঙ্গা অনশনকারীর ইউএনএইচসিআরের শংসাপত্র রয়েছে।

তিনি জানান, জেলের অবস্থা ভালো নয়। আত্মীয়রাও সেখানে দেখা করতে যেতে পারেন না। তারা মুক্তি চান এবং যেখানে জীবনের মান ভালো সেখানে চলে যেতে চান।

তিনি আরও জানান, অনশনকারীরা চাইছেন, তাদের ইউএনএইচসিআরের হাতে তুলে দেওয়া হোক এবং তৃতীয় কোনও দেশে পুনর্বাসন করা হোক। গত কয়েক মাস ধরে তারা আসাম সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য চিঠি লিখেছেন।

আসামের সবচেয়ে সিনিয়র আমলা রবি কোটা বলেন, তারা মুক্তির দাবি করছেন। তাদের সমস্যা বুঝতে এবং এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে রাজ্য সরকার কারা ও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের শিবিরে পাঠিয়েছে। একক আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই সবাই আটক হয়ে নেই। তাই আমরা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছি এই নির্দেশিকাগুলো কী, অভিযোগগুলি কী এবং আইনি অবস্থাটাই বা কী।

শরণার্থীদের প্রাথমিকভাবে কতদিন শিবিরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি রয়টার্স।

ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে বলেছে, গোটা ভারতে অভিবাসন ডিটেনশন কেন্দ্রে ৬৭৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬০৮ জনের বিরুদ্ধে চলমান কোনও বকেয়া মামলা বা দণ্ডাদেশ নেই। সব আশ্রয়প্রার্থী ও ডিটেনশন কেন্দ্রে আটক শরণার্থীর পরিস্থিতি সমাধান করতে ইউএনএইচসিআর নয়াদিল্লির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

অধিকার গোষ্ঠী রোহিঙ্গা মানবাধিকার উদ্যোগ (আরফোরআর) জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে ভুগছে, তাদের জলের অভাব রয়েছে এবং শিবিরে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। 

আরফোরআরের প্রধান সাবরে কাইও মিন বলেছেন, আমাদের মানুষগুলো গণহত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়েছে। যে দেশে তারা আশ্রয় চেয়েছিল, সে দেশে তারা বন্দি হলো।

'বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে' এসব শরণার্থীকে মুক্তি দিতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করে বলেছে, তাদের আটকে রাখা 'গুরুতর অন্যায়'।

কেএ