গরুকে খাওয়াচ্ছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

গরুকে রক্ষার নামে ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর প্রায়ই হামলা চালায় দেশটির কট্টোর হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের এসব হামলায় অনেককে নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়।

তার্কিস সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক মতামত কলামে ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক রুবেন ব্যানার্জি বলেছেন, এই গোরক্ষার নামে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা সমাজে এমন একটি দানবকে ছেড়ে দিয়েছে; যা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যেটির আক্রমণের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরাও।

তিনি এই মতামত কলামে আলোকপাত করেছেন রাজধানী নয়াদিল্লিতে কথিত গোরক্ষকদের হাতে প্রাণ হারানো এক বিত্তবান হিন্দু যুবকের কথা। ১৯ বছর টগবগে যুবক আরিয়ান মিশ্রা গত ২৪ আগস্ট বন্ধুদের সঙ্গে রাতে খাবার খেতে বের হয়েছিলেন। তারা গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। ওই সময় কিছু উশৃঙ্খল হিন্দুত্ববাদী তাদের মুসলিম গরু চোরাকারবারী হিসেবে ভুল করে বসে। তারা আরিয়ানের গাড়িকে ধাওয়া দেয়। এই ধাওয়া চলে ৩০ কিলোমিটার পথজুড়ে। এরপর গাড়ি থামানোর পর আরিয়ানকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। এতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তার।

রুবেন ব্যানার্জি বলেছেন, গত কয়েকদিনে ভারতে গোরক্ষকদের হাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবরগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু এগুলো চলছে গত ১০ বছর ধরেই।

তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অনেক জায়গায় গরু জবাই এবং খাওয়া নিষিদ্ধ। বিষয়টি স্পর্শকাতর কারণ হিন্দুরা গরুকে পূজা করে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন থেকেই এ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়। বেড়ে যায় মুসলিমদের উপর হামলার পরিমাণ। রুবেন ব্যানার্জির দাবি, ভারতে ধর্মীয় বিবেধ ঘণীভূত করতে গরুকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মোদির হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। তারা এরমাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃনা ছড়াচ্ছে। অপরদিকে শক্তিশালী করছে নিজেদের ভোট ব্যাংক।

মোদির দলের আস্কারা পেয়েছে অনেকেই নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন। লাঠি দিয়ে, গুলি করে মানুষকে হত্যা করছেন। কিন্তু এরজন্য কোনো ধরনের বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না তাদের।

পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে যত্রতত্র মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। গত সপ্তাহেই মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস বহনের অভিযোগে এক বৃদ্ধকে হেনস্তা করে কিছু উগ্রপন্থি। কিন্তু পরে জানা যায় তিনি মেয়ের জন্য মহিষের মাংস নিচ্ছিলেন। অপরদিকে উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলে বিরিয়ানি নিয়ে আসায় সাত বছর বয়সী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। হরিয়ানায় পশ্চিমবঙ্গের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এই লেখক তার মতামত কলামে বলেছেন, আরিয়ান মিশ্রাকে হত্যার পর অনেকে এটি নিয়ে সমালোচনা করছেন। তবে হিন্দুত্ববাদীরা আফসোস করছে যে— এক হিন্দু যুবককে মুসলিম ভেবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু যদি যুবকটি মুসলিম হতো তাহলে তারা এই হত্যাকাণ্ডকে স্বীকৃতি দিত।

মতামতটি সংক্ষেপ করা হয়েছে

এমটিআই